জাতীয় রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়াচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে আগামী ৩ আগস্ট রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও রাজনৈতিক ইশতেহার প্রকাশের ঘোষণা দিল দলটি।
রবিবার (আজ) সকাল ১১টায় ঢাকার বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ সময় তিনি দাবি করেন, “আন্তর্বর্তী সরকারের যে প্রতিশ্রুতি ছিল— জুলাইয়ে একটি ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে, সেটি বাস্তবায়নে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং এনসিপি আগামী ৩ আগস্ট নিজ উদ্যোগেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবে।”
নাহিদ ইসলাম জানান, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল— তার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সারাদেশব্যাপী এক মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে এনসিপি। এই উদ্যোগকে ঘিরেই মূলত ৩ আগস্টের ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত এসেছে।
তিনি বলেন, “এই ঘোষণাপত্র হবে বৈপ্লবিক রাজনৈতিক বার্তা। আমরা বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবি নিয়ে জনতার দুয়ারে যাব। দেশের প্রতিটি প্রান্তে আমাদের প্রতিনিধি পৌঁছাবে— শহর থেকে গ্রামে, শহীদদের কবর পর্যন্ত।”
নাহিদ ইসলাম আরও জানান, ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শিরোনামে এক মাসব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে এনসিপি। ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি। এরই অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই পালিত হবে ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’।
সে দিন বিশেষ দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভা আয়োজন করবে দলটি। ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে প্রধান কর্মসূচি— শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার’ পাঠ। ৫ আগস্ট উদযাপন করা হবে ‘ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস’।
“আমরা আসছি ৬৪ জেলায়,” বলেন নাহিদ ইসলাম, “আমরা কারো অনুমতির অপেক্ষায় নেই। বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, পুনর্গঠনের স্বপ্ন চায়। আমাদের ঘোষণাপত্র সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপরেখা দেবে।”
তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও একই বার্তা দেন। সেখানে লেখা হয়, “জুলাই শুধু একটি মাস নয়, এটি হচ্ছে গণআন্দোলনের প্রতীক। এই জুলাই থেকেই নতুন পথচলা শুরু হবে। জনগণের শক্তিই হবে আমাদের মূল ভিত্তি।”
এনসিপির এমন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি শুধু একটি প্রতীকী ঘোষণাপত্র নয়, বরং ভবিষ্যতের নির্বাচনী রূপরেখা ও বিকল্প সরকার গঠনের প্রস্তুতি।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এনসিপির দিকে দৃষ্টি রাখছে— বিশেষ করে তাদের তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয়তার জন্য। তবে ক্ষমতাসীন মহলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
-
এনসিপি বলছে সরকার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ
-
১-৩০ জুলাই: সারা দেশে পদযাত্রা
-
৩ আগস্ট: শহীদ মিনারে ঘোষণা ও ইশতেহার পাঠ
-
৫ আগস্ট: ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস
-
বিচার, সংস্কার, নতুন সংবিধান—এই তিন দাবিকে কেন্দ্র করে এগোচ্ছে আন্দোলন
সরকারের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে এনসিপির এমন স্পষ্ট ঘোষণা নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে দেশের রাজনীতিতে। আগস্টে শহীদ মিনারে তাদের ঘোষণাপত্র কতটা প্রভাব ফেলবে— তা এখন সময়ই বলবে। তবে দলটির এই সাহসী আগমন এবং ৬৪ জেলায় ‘জুলাই বার্তা’ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে বড় রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।



















