বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘আওয়ামী শাসনের নামে দেশে একটি পরিকল্পিত ফ্যাসিবাদী কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এই কাঠামো বহাল রেখে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তবে তা শুধুই ফ্যাসিবাদীদের স্বপ্ন পূরণের মঞ্চে পরিণত হবে।’
রোববার (১ জুন) পল্লবী মধ্য থানার জামায়াত আয়োজিত বাছাইকৃত কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বর্তমান কাঠামোতে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়’
ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যে পরিমাণ পক্ষপাতিত্ব, জবরদখল ও দমন-পীড়ন প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, তার মধ্যে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অবাস্তব কল্পনা মাত্র।’
তিনি দাবি করেন, ‘দেশে সুশাসন, সাংবিধানিক শাসন এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে, রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার এখনই সময়ের দাবি। শুধু কাগজে-কলমে নির্বাচন আয়োজন করে নতুন করে বৈধতার মোড়ক পরাতে গেলে, সেটা গণতন্ত্রের প্রতি চরম অবমাননা হবে।’
জুলাই গণহত্যার বিচার ও নির্বাচনপূর্ব পরিবেশ তৈরির আহ্বান
ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ও তার আগে-পরে যে দমননীতি ও সহিংসতা চালানো হয়েছে, বিশেষ করে জুলাই গণহত্যার ঘটনা— তার বিচার এখনো হয়নি। এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হওয়া এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘একটি নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো সবার জন্য সমান সুযোগ এবং একটি ভয়েরহীন পরিবেশ। সেই পরিবেশ গড়ে তোলা না গেলে আগাম নির্বাচন মানেই পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল।’
দ্বীন প্রতিষ্ঠা ইসলামী আন্দোলনের অপরিহার্য দায়িত্ব
শিক্ষাশিবিরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. রেজাউল করিম দ্বীনের পথে রাজনীতিকে ফরজ দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আল্লাহ তা’য়ালা নবী-রাসূলদের যেভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে পাঠিয়েছেন, আজ সেই একই দায়িত্ব ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কাঁধে এসে পড়েছে। এই দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “বিশ্বনবী (সা.) যেভাবে তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম তা অব্যাহত রেখেছেন, আমাদেরও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শপথবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকতে হবে।”
ড. করিম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মু’মিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। অতএব, দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে সরে দাঁড়ানো মানেই সেই চুক্তি ভঙ্গ করা।”
আন্দোলনের গতি বাড়াতে শপথ নেওয়ার আহ্বান
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীকে আরও সক্রিয়, সজাগ ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে আন্দোলনের পথে থাকার আহ্বান জানান ড. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “এই আন্দোলন বিচ্ছিন্নভাবে নয়, বরং ঐক্যবদ্ধ শপথবদ্ধ জীবনের মাধ্যমেই গতিশীল হতে পারে। একজন কর্মীকেও এ দায়িত্ব অবহেলা করার সুযোগ নেই।”
অনুষ্ঠানের অন্যান্য বক্তারাও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন
শিক্ষাশিবিরে সভাপতিত্ব করেন থানা আমির রইসুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন থানা সেক্রেটারি জুবায়ের হোসাইন রাজন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তরের মসলিসে শূরা সদস্য ও রূপনগর থানার আমির মাওলানা আবু হানিফ।
শিবিরে আরও উপস্থিত ছিলেন থানা শূরা কর্মপরিষদের সদস্যবৃন্দ।



















