ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের দাবিতে রাজধানীর নগর ভবনের সামনে এখন চলছে উত্তাল বিক্ষোভ। টানা চারদিন ধরে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ইশরাকের সমর্থকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সোমবার এ কর্মসূচি আরও তীব্র রূপ নেয়, যখন নগর ভবন কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
সমর্থকরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, "আমাদের একটাই দাবি – আইন অনুযায়ী নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। যতদিন ইশরাক হোসেন শপথ না নিচ্ছেন, আমরা এক ইঞ্চি সরবো না।"
এই দাবির মুখে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত গেজেটের বাস্তবায়ন না হওয়াকে ‘গণতন্ত্রের সঙ্গে প্রতারণা’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। সেই সঙ্গে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগও দাবি করেছেন।
মঞ্চে না থেকেও আলোচনার কেন্দ্রে ইশরাক
বিক্ষোভের চতুর্থ দিনে অবশেষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন। সোমবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেন, “মেয়রের চেয়ার আমার কাছে মূল বিষয় নয়। আসল বিষয় হলো—কারা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে স্বৈরশাসনের নাটক চালিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু ব্যক্তি ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে পড়েছে এবং তারা এই অস্থায়ী দায়িত্বকে স্থায়ী করার পরিকল্পনায় লিপ্ত।
ইশরাক আরও বলেন, “আমি অনেক অপমান মাথা পেতে নিয়েছি। বাবা-মা তুলে গালিগালাজ শুনেও চুপ থেকেছি, শুধু এজন্য যে – এদের মুখোশটা খুলে দিতে চেয়েছি। আজকে যারা আমাকে মেয়র পদে যেতে বাধা দিচ্ছে, তারাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী করবে, সেটা এই ঘটনাই পরিষ্কার করে দিয়েছে।”
প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ ও হুঁশিয়ারি
তার পোস্টে ইশরাক কড়া ভাষায় বলেন, “নিরপেক্ষতার নামে যারা একদলীয় প্রতিনিধি হয়ে গেছে, তাদের পদত্যাগ করা উচিত। এরা বিচারকদের হুমকি দিচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আদালতেও হস্তক্ষেপ করেছে। আমলাতন্ত্রের অংশবিশেষ এখন হাসিনার দোসর হয়ে কাজ করছে।”
ইশরাক উল্লেখ করেন, “একদিন সব নাম-পরিচয় ফাঁস হবে। জনগণের সামনে তাদের মুখোশ খুলে যাবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।”
আন্দোলন থামছে না, বরং আরও বিস্তৃত হচ্ছে
সমর্থকরা নগর ভবনের সামনের অবরোধ আরও জোরদার করেছে। তাদের স্লোগানে স্পষ্ট—“নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় মানতে হবে”, “গেজেট হয়েছে, এবার শপথ চাই”। আন্দোলনকারীরা এটাও বলছেন যে, “শুধু ইশরাক নয়, গণতন্ত্রকেই বন্দি করা হয়েছে।”
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, “যখন আদালত রায় দিয়েছে, নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে, তখন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে শপথ নিতে না দেওয়ার মানে হলো—ব্যবস্থা এখনো কারও দখলে। আমরা সেটাই ভাঙতে চাই।”
পটভূমি: নির্বাচনের রায় বদলে দেয় ভাগ্য
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইশরাক হোসেন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটে পরাজিত হন। কিন্তু তিন বছর পর, ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফলাফল বাতিল করে এবং ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন ইশরাকের মেয়র হওয়ার গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হলো, আজ পর্যন্ত তার শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়নি।
শেষ কথা: লড়াই এখন শুধুই একটি চেয়ারের জন্য নয়
নিজের বক্তব্যের শেষাংশে ইশরাক বলেন, “আমি হাসিনাকেও বলেছিলাম – কবর ঠিক করা আছে, আল্লাহর হুকুম হলে সেখানেই হবে। কিন্তু লড়াই থামবে না। এটা শুধু একটি চেয়ার পাওয়ার প্রশ্ন নয়, এটা গণতন্ত্র এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। আমরা দাবি আদায় করব, অথবা আল্লাহর নির্ধারিত স্থানে মাটির নিচে শায়িত হব।”