বিস্ফোরক বক্তৃতা শেষে চাঞ্চল্য, হারিয়ে গেল নুরুল হক নুরের মোবাইল!
ঢাকা, ৯ মে ২০২৫ — রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত একটি উত্তপ্ত রাজনৈতিক সমাবেশে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নিতে গিয়ে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হারিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে গণঅধিকার পরিষদের ডাকা ওই বিক্ষোভ সমাবেশে হাজারো নেতাকর্মী জমায়েত হন পল্টন মোড়ে। সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তুলে বক্তৃতা দেন ভিপি নুর। এ সময় মিছিল ও স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই রাজনৈতিক এলাকা। সমাবেশে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে।
কিন্তু বক্তৃতার কিছুক্ষণ পরই ঘটল অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। ভিপি নুর জানান, তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি মিছিলের ভিড়ে ‘রহস্যজনকভাবে’ হারিয়ে গেছে। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন,
“সিমসহ মোবাইলটি পল্টন এলাকায় মিছিল থেকে হারিয়ে গেছে। তাই কল বা মেসেজে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।” তিনি পোস্টটিতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও উল্লেখ করেন, যেন কেউ ফোন পেয়ে থাকলে ফেরত দিতে পারেন।
দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত চুরি?
সাধারণভাবে এটি হয়তো ‘হারিয়ে যাওয়া’ বলেই বিবেচিত হতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অনুসারীদের অনেকে এটিকে নিছক দুর্ঘটনা না বলে পরিকল্পিত ঘটনা বলেই মনে করছেন। তাদের দাবি, ভিপি নুরের ফোনে থাকতে পারে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা, সাংগঠনিক যোগাযোগ, এমনকি স্পর্শকাতর তথ্য। এমন একটি ফোন হারানো মানে শুধুই ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি।
বিষয়টি আরও চাঞ্চল্যকর হয়েছে, কারণ ওই সময় এলাকায় অনেক গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। তবুও ভিপি নুরের ফোন কীভাবে হারাল—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সমাবেশে কি নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল?
সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকলেও নিরাপত্তা ছিল তুলনামূলকভাবে ঢিলেঢালা। ভিপি নুরের ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা বুঝতেই পারিনি কখন কীভাবে ফোনটি হারাল। পরে নুর ভাই নিজেই খেয়াল করেন, ফোন নেই।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা। কেউ কেউ দাবি করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত নজরদারির অংশ হতে পারে, যাতে ভিপি নুর ও তার রাজনৈতিক কার্যক্রম নজরে রাখা যায়। অন্যদিকে, অনেকে এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কৌশল বলেও সন্দেহ করছেন।
সমাবেশে কি বললেন ভিপি নুর?
মোবাইল হারানোর ঘটনা ছাড়াও সমাবেশে ভিপি নুরের বক্তব্য ছিল অত্যন্ত দৃঢ় ও উত্তাল। তিনি বলেন, “এই সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ একটি নিষিদ্ধ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় তাদের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ আজ দুর্নীতির গভীর খাদে। মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার নেই, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত, বিচার ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন, এবং এই সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো সমাধান নেই।”
সামনে কী?
ভিপি নুরের মোবাইল ফোন যদি পরিকল্পিতভাবে চুরি হয়ে থাকে, তাহলে এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত বিষয় নয়—বরং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এখন দেখার বিষয়, দলটি এ নিয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয় কি না কিংবা কোনো তদন্তের দাবি তোলে কি না।
অন্যদিকে, অনেক অনুসারী ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ফোনটির সন্ধান চেয়ে নুরকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন। তবে এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত মোবাইল হারানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে—যেখানে একদিকে রাজপথে প্রতিবাদ, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা।