স্কুলের দরজা-জানালা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নিলেন বিএনপি নেতারা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকারি স্কুলের দরজা-জানালা ও রড রাতারাতি গায়েব! যশোরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সামগ্রী বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে বিএনপির তিন নেতার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক জানতেন, নাকি সহযোগী ছিলেন?..

যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবিশ্বাস্য এক কাণ্ড ঘটেছে। গ্রামের শিক্ষা ও শিশুর ভবিষ্যতের মুল ভিত্তি হিসেবে পরিচিত এফএমবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ভবনের লোহার দরজা, জানালা ও রড চুরি বা গোপনে নয়, প্রকাশ্যেই বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির তিন নেতার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমির হোসেন, দেয়াড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক শাহ আলম সাগর এবং বিএনপি নেতা আমিন হোসেন মিলে স্কুল ভবনের মূল্যবান লোহার মালামাল বিক্রি করে সেই অর্থ নিজেরা ভাগ করে নিয়েছেন।

তবে এখানেই শেষ নয়। বিস্ময়করভাবে এই কাজে তাদের সহায়তা করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহান ঝরনা — এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের মধ্য থেকে।

 স্থানীয়দের অভিযোগ ও উদ্বেগ

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্কুলের একটি পুরনো ঘর ভাঙার পর সেই ঘরের দরজা, জানালা এবং লোহার রড স্থানীয় নেতারা নিজেরা বিক্রি করে দিয়েছেন।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“এই স্কুল আমাদের গ্রামের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থে স্কুলের সম্পদ লুটে নিচ্ছে। এটা কি আমরা মেনে নিতে পারি?”

স্থানীয় একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী জানিয়েছেন, তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কারণ অভিযোগ তুললেই চাকরি হারানোর কিংবা রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে তারা মুখ খুলতে পারছেন না।

 অভিযুক্তদের বক্তব্য

ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমির হোসেন এই অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে বলেন,

“প্রধান শিক্ষকের অনুমতিতে আমরা ঘর ভাঙার মালামাল নিয়েছি। আমার বাড়ির রাস্তার কাজের জন্য মাত্র ২ হাজার টাকার সুড়কি ব্যবহার করেছি।”

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা শাহ আলম সাগর বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন,

“আমি তো ওই স্কুলে শুধু ওয়াশব্লকের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। মাল বিক্রির সঙ্গে আমার কোনো যোগসূত্র নেই।”

 প্রধান শিক্ষকের অবস্থান

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহান ঝরনা জানিয়েছেন,

“আমরা সম্প্রতি একটি নতুন রুমের বরাদ্দ পেয়েছি। এজন্য একটি পুরনো ঘর ভাঙা হয়। সে ঘরের মালামাল আমির ও সাগর নিয়ে গেছে। তারা বলেছে, মাল বিক্রি করে ২৬ হাজার টাকা পেয়েছে এবং আমাকে ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিল, আমি তা নিইনি।”

তিনি আরও বলেন,

“ঘটনার পর আমি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।”

 প্রশাসনের নিরবতা

ঘটনার বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সোহেল রানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে, যশোর সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন,

 

আমি এই বিষয়ে আগে কিছু জানতাম না। এখনই খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


 

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ এমনভাবে দলীয় রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা অপব্যবহার ও বিক্রি হয়ে যাওয়া কেবল উদ্বেগজনকই নয়, বরং শিশুদের শিক্ষার ভবিষ্যৎকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

যদি তদন্তে এসব অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে—কিভাবে রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে পারে।

No comments found