close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

সীমান্তে বাংলাদেশিকে গুলি করে লাশ নিয়ে গেল বিএসএফ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুলাউড়ার দত্তগ্রামে সীমান্তের কাটাতারে বিএসএফ-এর গুলিতে প্রাণ গেল এক তরতাজা যুবকের। মরদেহ নিয়েও ফিরল না ভারতীয় বাহিনী। নিখোঁজের অভিযোগে হতবাক পরিবার ও গ্রামবাসী, নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।..

সীমান্তে রক্তের ছাপ, গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের লাশ নিয়ে গেল বিএসএফ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম সীমান্তে আবারও ঘটল মর্মান্তিক ঘটনা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যা করেছে এক বাংলাদেশি যুবককে, এরপর লাশও নিয়ে গেছে নিজেদের দখলে। নিহত এই তরুণের নাম প্রদীপ বৈদ্য। বয়স আনুমানিক ২৫-২৭ বছর। স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত ৩১ মে, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে দত্তগ্রামের সীমান্তসংলগ্ন নোম্যান্স ল্যান্ডে ঘটেছে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

শান্ত জনপদে হঠাৎ গুলির শব্দ

প্রদীপ বৈদ্য ছিলেন কুলাউড়া উপজেলার দত্তগ্রাম এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। পিতা শৈলেন্দ্র বৈদ্যের সন্তান তিনি। পাড়ার মানুষজন জানায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রদীপ কৃষিকাজে জড়িত ছিল। অত্যন্ত সাদাসিধে ও নিরীহ যুবক হিসেবে এলাকার লোকজন তাকে চিনতেন। শনিবার রাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় যাওয়ার পর হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো দত্তগ্রাম। পরে স্থানীয়রা জানতে পারে, বিএসএফ-এর গুলিতে প্রাণ গেছে প্রদীপের, আর তার মরদেহও নিয়ে গেছে ভারতীয় বাহিনী।

পরিবার ও গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া

শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন নিহতের পরিচয়। তিনি বলেন, “প্রদীপ লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষিকাজ করতো। রাতে সীমান্তের কাছে গেলে বিএসএফ গুলি করে। এরপর তারা মরদেহ নিয়ে যায়। আমরা রাতেই চেষ্টা করেছি কিছু করতে, কিন্তু পারিনি। এখন প্রদীপের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থানায় অবস্থান করছি। থানায় জিডি করা হবে।”

ঘটনার পর থেকেই হতভম্ব পরিবার সদস্যরা বারবার প্রশ্ন করছেন, নিরীহ প্রদীপ কী কারণে সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হলো? এমনকি তার লাশও কেন ফেরত দেওয়া হলো না?

বিজিবি ও প্রশাসনের অবস্থান

ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কিছুটা সময় নেয় প্রতিক্রিয়া জানাতে। ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, “ঘটনার কথা লোকমুখে শুনেছি। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ জিডি করেনি কিংবা কোনো ধরনের মিসিং রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। বিএসএফ থেকেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।”

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে বিজিবি ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে পারে এবং মরদেহ ফেরতের বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারে।

সীমান্তে এভাবে প্রাণ ঝরে পড়া বন্ধ হবে কবে?

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এ ধরনের গুলির ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই শোনা যায়, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। কিছু ঘটনায় পাচার বা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ থাকে, কিন্তু অনেক ঘটনাতেই নিরীহ সাধারণ মানুষ শিকার হন সীমান্ত পরিস্থিতির।

প্রদীপ বৈদ্যর ঘটনা আবারও সেই প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে— কতটা নিরাপদ আমরা নিজেদের মাটিতে, নিজের সীমান্তে?

এ ঘটনায় গ্রামবাসীর মাঝে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে বলছেন, “এটা যদি আমাদের ছেলের সাথে হয়, আগামীকাল কার হবে বলা যাচ্ছে না।” স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত পদক্ষেপ এবং কূটনৈতিকভাবে বিএসএফ-এর সঙ্গে কড়া বার্তা দেওয়ার দাবি তুলেছেন।


বিচার না হলে বারবার ঘটবে এই ‘প্রদীপ হত্যাকাণ্ড’

একজন নিরীহ যুবক প্রাণ হারালেন, তার লাশও পরিবারের কাছে আসেনি। প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া অনেকটা ‘দেখি কী হয়’ মনোভাবের। অথচ প্রতিটি মুহূর্তেই একটি পরিবারের বুক ফাটা কান্না, গ্রামবাসীর আতঙ্ক, আর দেশের জন্য এক গভীর উদ্বেগ। এমন ঘটনার দ্রুত ও কড়া প্রতিবাদ না হলে, সীমান্তের রক্তপাত থামবে না।

Zahidul Islam
Zahidul Islam 3 月 前
খুবই দুঃখজনক
0 0 回复
显示更多