সিলেটের প্রশাসনিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনা! সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
বুধবার (১৮ জুন) সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে তিনি জেলা প্রশাসকের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “আপনি সরকারকে ভুল বার্তা দিচ্ছেন, স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা না করেই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। পাথর শ্রমিকদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ভেঙে দিচ্ছেন, অন্ধ কল্যাণ সমিতির স্থাপনাও উচ্ছেদ করছেন। আপনি যদি মনে করেন দু’একজনকে বশ করে সবকিছু চালিয়ে যাবেন, তাহলে আপনি মারাত্মক ভুল করছেন।”
এদিনের এই সমাবেশে পাথর ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “৫ জুলাইয়ের পর আপনার সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হবে না। আপনি পদত্যাগ করুন, সিলেটের মানুষ শান্তি চায়।”
পাথর কোয়ারি ও পরিবহন খাতের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা ইতোমধ্যে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে —
১. সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া
২. ক্রাশার মেশিন উচ্ছেদ বন্ধ
৩. পরিবহন শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ
৪. প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্ত বাতিল
৫. পাথর শ্রমিকদের কাজের নিশ্চয়তা
এই দাবি পূরণ না হলে ৫ জুলাই থেকে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেন আরিফুল। তিনি বলেন, “সিলেটকে অচল করে দেওয়া হবে, এটা আমাদের পাথর শ্রমিকদের জীবন-মরণের প্রশ্ন।”
সাবেক মেয়র আরিফুলের মূল ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হলো — জেলা প্রশাসকের হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান। মেজরটিলা, ক্রাশার মিল, অন্ধ কল্যাণ সমিতির অফিস — একের পর এক স্থাপনায় হাত দিয়েছেন ডিসি মুরাদ। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা না করে পরিচালিত এই অভিযানে শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরিফুল বলেন, “জেলা প্রশাসক সিলেটে একক ক্ষমতায় চলছেন। এই শহরের সঙ্গে যারা জীবন কাটিয়েছে, যারা পাথর শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠেছে এই অর্থনীতি, তাদের অবমূল্যায়ন করছেন তিনি।”
সিলেটের রাজনৈতিক এবং শ্রমিক মহলে এই বক্তব্যের পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই প্রতিবাদকে “শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের লড়াই” বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, প্রশাসনের একাংশ আরিফুল হকের বক্তব্যকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলেও দাবি করছেন।
তবে সমাবেশে উপস্থিত সাধারণ শ্রমিকদের চোখেমুখে ছিল ক্ষোভ আর হতাশা। তাদের একটাই কথা — “কাজ না থাকলে পরিবার চলবে কীভাবে?”
৫ জুলাই এখন সিলেটবাসীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রশাসন যদি পাথর শ্রমিক ও পরিবহন শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে শহরজুড়ে দেখা দিতে পারে চরম অচলাবস্থা।
সাবেক মেয়র আরিফুল হকের হুঁশিয়ারি একটাই:
“সরকারি চাকরি করতে এসেছেন, ঠিক আছে। কিন্তু মানুষের সম্মান নিয়ে খেলা করলে আপনি এ শহরে টিকতে পারবেন না। সময় থাকতে নিজেই সরে যান।”