সিলেট সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ঘটেছে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর এক প্রতারণার ঘটনা। বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার সময়, এক ছাত্রী জাল প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আটক হন। বিষয়টি জানাজানি হতেই পুরো কেন্দ্র জুড়ে তৈরি হয় চরম উত্তেজনা।
পরীক্ষা শুরুর পর, কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র যাচাই করার সময় এক ভয়াবহ কেলেঙ্কারি সামনে আসে। দেখা যায়, একই সিরিয়াল নম্বরযুক্ত দুটি প্রবেশপত্র দুই ছাত্রীর হাতে। উভয়েই নিজেদের পরিচয় দেন সিলেটের মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সিলেট শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা।
জানা যায়, আটক হওয়া ছাত্রীর নাম তাহমিনা আক্তার। তার হাতে থাকা প্রবেশপত্রটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং অন্যজন—ফয়জিয়া আক্তার—আসল প্রবেশপত্রের অধিকারী। ফলে ফয়জিয়াকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, তাহমিনাকে তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে আটক করা হয়।
তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাহমিনা জানান, পরীক্ষার ফি নির্ধারিত সময়ে দিতে না পারায় তার বোন জামাই এক দালালের মাধ্যমে ফি জমা দেন এবং প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু পরীক্ষার দিনে কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন, সেটি ভুয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি কিছুই জানতাম না। আমার বোন জামাই সব করেছেন। সে এখন অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি।”
এ সময় ওই ছাত্রী ভেঙে পড়েন কান্নায়। মানবিক দিক বিবেচনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে পরিবারের জিম্মায় দিলেও পুরো ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং দালাল চক্রের কর্মকাণ্ড নিয়ে।
সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ জেড এম মাঈনুল হোসেন জানান, “জাল এডমিট কার্ডের পেছনে ছাত্রী বা পরিবারের কারও ইন্ধন থাকলে তাদের অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া উচিত। তবে যদি তারা প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে, তাহলে দালালের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
এদিকে সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পরীক্ষা কেন্দ্র থেকেও কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য জানানো হয়নি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এই ঘটনার মাধ্যমে ফের একবার সামনে এলো আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে দালালচক্রের সক্রিয় ভূমিকা। একজন পরীক্ষার্থী কীভাবে ভুয়া প্রবেশপত্র হাতে পরীক্ষাকক্ষে পৌঁছাল, সেই প্রশ্নের উত্তর এখন পুরো এলাকাবাসীর মনে। তদুপরি, নিরীহ শিক্ষার্থীদের এভাবে প্রতারণার শিকার হওয়াও আমাদের সমাজের জন্য বড় একটি উদ্বেগের বিষয়।
শিক্ষা বোর্ড এবং প্রশাসনের উচিত এই ঘটনায় গভীর তদন্ত করে শুধু দালাল নয়, যারা এদের সহযোগিতা করেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা। না হলে এমন ঘটনা আরও শিক্ষার্থীকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দেবে।