ছেলেটির জন্ম হয়েছিল এক কর্মজীবী পরিবারে। বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। এক সময় তারা বদলি হয়ে এক ছোট, নিরিবিলি শহরতলিতে স্থায়ী হন। সেখানেই ছেলেটির শৈশব কেটেছে—সবুজ মাঠ, খেলার মাঠে হাসি, আর স্কুল-কলেজের দৌড়ঝাঁপে ভরা দিন।
ছেলেটি খেলাধুলায় ছিল অসাধারণ। হ্যান্ডবল আর ক্রিকেটে তার পারদর্শিতা ছিল নজরকাড়া। তার চারপাশে গড়ে উঠেছিল এক শক্তিশালী বন্ধু-মহল। সে ছিল প্রাণবন্ত, জনপ্রিয়, আর বিশ্বাসী এক বন্ধু—যার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইত সবাই।
কিন্তু হঠাৎ এক বছর, একটি অপূরণীয় শূন্যতা তার জীবন ওলটপালট করে দেয়। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারকে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয় আরেকটি নতুন অঞ্চলে—অচেনা, অজানা, আর একেবারেই আলাদা এক পরিবেশে। সেই নতুন জায়গায় তার মন বসে না। আগের মতো কেউ নেই, নেই সেভাবে বন্ধুও।
সে মনে মনে একটা অদ্ভুত প্রতিজ্ঞা করে—যারা ছিল তার প্রকৃত বন্ধু, তাদের সম্মানার্থে সে নতুন করে আর কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে না। এই এক সিদ্ধান্ত তাকে প্রায় বিশ বছর ধরে একা করে রেখেছে। নতুন জায়গার কারও সঙ্গেই গড়ে ওঠেনি কোনো সম্পর্ক, কোনো গভীরতা।
কিন্তু সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক সত্যটা আসে অনেক পরে। সেই পুরোনো, প্রিয় বন্ধুরাই একদিন দূরে সরে যায় তার অসুস্থতার কথা শুনে । অথচ সে চায়নি কিছুই—শুধু চেয়েছিল একটা ‘কেমন আছো?’ সেই পুরোনো বন্ধুত্বের ঘ্রাণ।
তবুও সে কারও কাছে মুখ খোলে না। অন্যদের কাছে তাদের ছোট হয়ে যাওয়া সে চায় না। নিজের যন্ত্রণাটা সে লুকিয়ে রাখে এক গভীর সাহসের ভেতর।
সে আজও অপেক্ষায় থাকে,
কখন কোথাও, কেউ এসে বলবে,
“তুই একা না… আমরাও আছি।”