close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

শুভ জন্মদিন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আজ ৮৫ বছরে পা রাখলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেলজয়ী এই কিংবদন্তিকে শুভেচ্ছায় ভাসিয়েছে দেশ-বিদেশ। জন্মদিনে ফিরে দেখা গেল তার বিস্ময়কর জীবন ও অর্জনের গল্প।..

আজ ২৮ জুন, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও মানবতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই ক্ষণজন্মা মানুষটি তার জীবনকর্ম দিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বকে দেখিয়েছেন দারিদ্র্য বিমোচনের নতুন পথ। তাকে আজ স্মরণ করছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মানুষ, সংস্থা ও সরকারপ্রধানরা।

ড. ইউনূসের পিতা দুলা মিঞা সওদাগর ছিলেন একজন মহুরী, আর মা সুফিয়া খাতুন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই ড. ইউনূস ছিলেন মেধাবী। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষায় সারা পূর্ব পাকিস্তানে ১৬তম স্থান অর্জন করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

পরে ফুলব্রাইট স্কলারশিপে আমেরিকায় গিয়ে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। একই বছর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকায় থেকেই প্রবাসীদের নিয়ে গঠন করেন ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’, যা যুদ্ধপক্ষের আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে অবদান রাখে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল ইউনূসের জীবন বদলে দেওয়া অধ্যায়। তখন তিনি ঠিক করেন, শুধু বক্তৃতা বা শিক্ষা দিয়ে নয়—বাস্তবে কিছু করে দেখাতে হবে। তিনি গরিবদের জন্য ঋণ প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে চালু হয় পরীক্ষামূলক মাইক্রোক্রেডিট প্রকল্প, যা ১৯৮৩ সালে রূপ নেয় ‘গ্রামীণ ব্যাংক’-এ।

এই ব্যতিক্রমী ব্যাংকিং মডেল শুধু বাংলাদেশেই নয়, ছড়িয়ে পড়ে ৪০টিরও বেশি দেশে। বিশেষ করে নারীদের আর্থিকভাবে ক্ষমতায়নে এর অবদান অতুলনীয়।

২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকসহ ড. ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তবে এটাই শেষ নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল—এই দুই অভিজাত পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরস্কারসহ আরও অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার রয়েছে তার নামের পাশে।

তিনি সেই বিরল ব্যক্তি, যিনি অর্থনীতির মডেলকে মানবকল্যাণে রূপান্তরিত করে বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে, ব্যবসা ও সমাজকল্যাণ একসাথে এগোতে পারে।

২০২4 সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। একপর্যায়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে, ৮ আগস্ট ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।

আজ তিনি কেবল একজন অর্থনীতিবিদ কিংবা সমাজসেবকই নন, বরং বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক ও মানবিক অভিভাবক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

ড. ইউনূসের জন্মদিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছার বন্যা বয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়, উদ্যোক্তা এবং সাধারণ মানুষ সবাই আজ তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

৮৫ বছর বয়সেও যিনি প্রতিদিন স্বপ্ন দেখেন দারিদ্র্যহীন পৃথিবীর, যিনি কোনো পদ-পদবির মোহে নয়, বরং মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন — তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার জন্মদিন শুধু একটি দিন নয়, এটি উদযাপন করার দিন — একজন প্রকৃত বিশ্বনাগরিকের।

শুভ জন্মদিন, প্রফেসর ইউনূস! আপনি আমাদের গর্ব, আমাদের অনুপ্রেরণা

Nessun commento trovato