close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

শপথ ছাড়াই ‘মেয়রের আসনে’ ইশরাক! অচল নগর ভবন, দুর্ভোগে লাখো নাগরিক..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না নিয়েই ইশরাক হোসেনের কার্যক্রমে অচল হয়ে পড়েছে পুরো নগর ভবন। পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন থেকে জন্মনিবন্ধন—সব সেবাই এখন বন্ধ। নাগরিক দুর্ভোগ চরমে, ক্ষোভে ফুঁসছে ..

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) শুরু হয়েছে এক নজিরবিহীন প্রশাসনিক অচলাবস্থা। শপথ না নেওয়া সত্ত্বেও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন মেয়রের মতো দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার প্রেক্ষিতে নাগরিক পরিষেবায় নেমে এসেছে বিপর্যয়, সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার।

গত ১৫ মে থেকে শুরু করে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রম। জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন, বর্জ্য অপসারণ—সব কিছুতেই স্থবিরতা। এ অবস্থার জন্য কেউ দায় স্বীকার না করলেও নাগরিক দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে।

নগর ভবনে শপথবিহীন মেয়রের মতো গত ১৫ জুন এক কনফারেন্সে সভা করেন ইশরাক হোসেন। সভার ব্যানারে তার নামের পাশে লেখা ছিল “মাননীয় মেয়র”, আর তিনি নিজেই ছিলেন প্রধান অতিথি। ওই সভায় তিনি কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন এবং চলমান আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান বজায় রাখার ঘোষণা দেন।

সেই সঙ্গে একই দিনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক এবং মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এমনকি করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি।

এতসব কর্মকাণ্ডে প্রশ্ন উঠেছে—শপথ না নেওয়া কেউ কীভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেন?

সেবাপ্রার্থীরা প্রতিদিন নগর ভবনের সামনে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আজিমপুরের হাবিবুর রহমান বলেন

আমার বাচ্চার জন্মনিবন্ধন করাতে পারছি না। পাসপোর্ট না হলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে পারবো না। গত এক মাসে চারবার এসে ফিরে গেছি!

বকশিবাজারের ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন,“আমার ট্রেড লাইসেন্স ঝুলে আছে। ব্যবসা শুরু করতে পারছি না, সিটি কর্পোরেশন বলছে সব বন্ধ। একমাস ধরে শুধু ঘুরছি।

এমন শত শত অভিযোগ প্রতিদিন জমা হচ্ছে কর্পোরেশনের চারপাশে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রায় ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও ২৮ ধরনের দৈনন্দিন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। এর ফলে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সড়ক উন্নয়ন, মশক নিধন, বর্জ্য অপসারণসহ প্রতিটি বিভাগে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

বৃষ্টি হচ্ছে, রাস্তার কাজ তদারকি করা যাচ্ছে না। অনেক রাস্তায় গর্ত হয়ে গেছে, কিন্তু সেগুলো মেরামতের কাজ থেমে আছে। আমরা নিজেরাও অফিসে ঢুকতে পারছি না।

এই আন্দোলন চলমান থাকবে। আদালতের রায়কে জনগণের রায় হিসেবে মেনে নিতে হবে। এখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ নেই।”

অন্যদিকে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এক বক্তব্যে বলেছেন,

মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ, তাই নতুন কাউকে শপথ দেওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশে দেরি করেছে ফলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন কার্যত দখলে চলে গেছে। আমরা নাগরিক সেবা দিতে পারছি না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন,

শপথ না নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মতো ঘটনাকে ভয়ানক দৃষ্টান্ত বলেই বিবেচনা করতে হবে। এতে ভবিষ্যতে নাগরিক প্রশাসনে অরাজকতা বাড়তে পারে।”

১৮ জুন নগর ভবনে স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইশরাক হোসেন সরাসরি বলেন,

যদি আন্দোলনকারীদের ওপর কোনো ফ্যাসিস্ট আচরণ করা হয়, আমি সর্বশক্তি দিয়ে পাশে থাকবো।

আপনারা সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সেবা কার্যক্রমও চালিয়ে যেতে হবে।

শপথ না নেওয়া একজন নেতার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন কার্যক্রম পরিচালনা করার নজির ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। এতে শুধু জনদুর্ভোগ বাড়ছে না, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে, সেটা এখনও অনিশ্চিত। তবে একথা নিশ্চিত—এই অরাজক পরিস্থিতির বলি এখন ঢাকাবাসী।

Tidak ada komentar yang ditemukan