close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
দেশে এখনো চলছে শীতের মৌসুম, তবুও শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনা। গত সপ্তাহ থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭০-৮০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে, যা কখনো কখনো ১৯৩ মেগাওয়াটেও পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বেড়ে গেলে সংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী মার্চে শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান, তখন এই পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের অসহায়ত্ব ও বিদ্যুৎখাতের সংকট
বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির অর্থ সংকটের কারণে সরকার কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের বকেয়া বিল না পাওয়ায় উদ্যোক্তারা জ্বালানির এলসি খুলতে পারছেন না। অন্যদিকে, গ্যাস সংকটও তীব্র হচ্ছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র চালানো হতে পারে, কিন্তু এতে সরকারের ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাবে।
বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৩৩৯ মেগাওয়াট হলেও বাস্তবে এই উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা কখনোই ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। গত মাসেও দেশে লোডশেডিং হয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয় ২৮ জানুয়ারি, যা ছিল ১৯৩ মেগাওয়াট। শীতকালীন চাহিদায় যেখানে এই অবস্থা, সেখানে গ্রীষ্মে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে করণীয়
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফয়জুল কবির খান জানান, "আমরা বিদ্যুৎ যে দামে কিনি আর যে দামে বিক্রি করি, তার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। গড়ে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয় ৮.৯০ টাকা ইউনিট প্রতি, কিন্তু কিনতে হয় ১২-১৩ টাকা দরে। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া বিল না পেলে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে সরকার চেষ্টা করছে সবদিক সমন্বয় করে পরিস্থিতি সামাল দিতে।"
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, "আসন্ন গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে পূর্ণ সক্ষমতায় চালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং বেসরকারি খাতের কিছু বকেয়া বিল পরিশোধের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।"
গ্রীষ্মে লোডশেডিং রোধে বিকল্প ব্যবস্থা দরকার
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, "আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে হলে বকেয়া বিল কিছু কিছু করেও পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হলে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হয়, যা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।"
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, "গ্রীষ্মে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে হবে। এছাড়া এলএনজি আমদানি বাড়াতে পারলে কিছুটা স্বস্তি আসবে।" তিনি আরও বলেন, "সরকার যদি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিলের আংশিক পরিশোধ করে, তবে তারা উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবে। তাছাড়া বিতর্কিত কোম্পানিগুলোর কেন্দ্র কিনে নিলে দীর্ঘমেয়াদে সংকট কিছুটা কমতে পারে।"
বিদ্যুৎ চাহিদা ও সম্ভাব্য সমাধান
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ৬% হারে বাড়ছে। মার্চে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে। এই চাহিদা মেটাতে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৬,৪০০ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৫,৫৫৮ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৪,১৪৯ মেগাওয়াট এবং আমদানি করা বিদ্যুৎ থেকে ২,১২৫ মেগাওয়াট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তবে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিশোধ না হলে, এই চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না।
বর্তমানে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে সরকার বড় অঙ্কের লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে, যা মূলত সরকারের ভর্তুকির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত ভর্তুকি না ছাড়লে, এই সংকট আরও তীব্র হবে।
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি