গ্যাস সংকটে নরসিংদীর বস্ত্রশিল্পে ধস: বিদেশি অর্ডার বাতিল, মালিকদের লোকসানের আশঙ্কা
নরসিংদীর বস্ত্রশিল্পের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্যাস সংকট। গ্যাসের চাপ কম থাকায় দিনের অর্ধেক সময় উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে কারখানাগুলো। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানিমুখী পোশাক খাত, কারণ যথাসময়ে অর্ডার ডেলিভারি দিতে না পারায় বিদেশি বায়াররা ক্রমাগত অর্ডার বাতিল করছেন।
শিল্প মালিকদের অভিযোগ, গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রতি ইউনিটের দাম ১১ টাকা থেকে ৩০ টাকা করা হলেও সংকট নিরসন হয়নি। এখন পরিস্থিতি এমন যে, উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কারখানায় অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা
নরসিংদীর বিভিন্ন শিল্প এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, যেখানে শ্রমিকরা ব্যস্ততার কারণে দম ফেলার সময় পেতেন না, সেখানে এখন তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। গুদামে জমে থাকছে কোটি কোটি টাকার কাপড়। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
শিল্প মালিকদের দাবি, সরকার যদি দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প এলাকা নরসিংদী ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
ঈদের আগে বড় ধাক্কা!
এ অবস্থায় সামনে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশীয় বাজারে তৈরি পোশাক সরবরাহ নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর ঈদের মৌসুমে নরসিংদীর কাপড়ের চাহিদা বাড়ে, কিন্তু এ বছর গ্যাস সংকটে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক শিল্প মালিক জানান, "গ্যাস সরবরাহের সংকটের কারণে আমাদের প্রতিদিন ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন চালানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।"
গ্যাস সংকটের কারণ কী?
নরসিংদী বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুনুর রহমান জানিয়েছেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি নতুন করে চালু হওয়ায় সেখানে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ শিগগিরই এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি ও সরকারের করণীয়
নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রাশেদুল হাসান রিন্টু জানিয়েছেন, "গ্যাস সংকটের কারণে শুধু শিল্পকারখানাই নয়, দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের বাজার থেকে সরে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে।"
শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন এবং বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের জন্য সরকারকে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ করেছেন।



















