রিপোর্ট মেহেদী হাসান: নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন রেজওয়ানাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ব্যক্তি সম্পর্কে অশালীন ও অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
গত ৯ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমার রায়ের স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে বরখাস্তের পরও তার আচরণে পরিবর্তন না এসে বরং আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি একাধিক সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা এবং সাধারণ নাগরিকের নাম ও ছবি প্রকাশ করে যাচ্ছেন। পোস্টগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে আপত্তিকর শব্দ, চরিত্রহননের বক্তব্য এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ।
শারমিনের একাধিক পোস্টে উঠে এসেছে নরসিংদী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার সাবেক মেয়রের নাম। একটি ভাইরাল হওয়া কথিত ফোনালাপের সূত্র ধরে তিনি তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনেন। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করতে দেখা যায় তাকে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলেও বেশিরভাগই সামাজিক সম্মান রক্ষায় মুখ খুলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, শারমিন রেজওয়ানা তার দাবিতে অটল। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, কারও প্রতি বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ—সব মিলিয়ে তার পোস্টে ব্যক্তিগত অভিযোগের ছড়াছড়ি।
তবে তার এসব দাবির অনেকাংশেই মিলছে না বাস্তবতা। যেমন, ধর্ষণের স্থান হিসেবে যেটি তিনি উল্লেখ করেছেন, সেই আজিজ বোর্ডিং প্রায় ২৬ বছর আগেই বিলুপ্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মালিকপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, “শারমিন স্কুলজীবন থেকেই উশৃঙ্খল ছিল। তার নানা কীর্তির কথা এলাকায় কারও অজানা নয়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক—অনেককেই সে ফাঁদে ফেলেছে বলে শোনা যায়।”
রফিক আরও জানান, একসময় শারমিনের একটি বিয়ে হয়েছিল এক প্রবাসীর সঙ্গে, কিন্তু ব্যক্তিগত অস্থিরতা ও বিতর্কিত আচরণের কারণে সেই সম্পর্কও ভেঙে যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার মা, বোন ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রাও বর্তমানে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বোঝানোর বহু চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষিকার এমন বেপরোয়া আচরণে নরসিংদী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আলোচনার ঝড়। ভুক্তভোগীরা দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “একজন সরকারি শিক্ষক যদি এভাবে সামাজিক মাধ্যমে দায়িত্বহীন আচরণ করেন, তবে তা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ভাবমূর্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।”