close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

শিবিরের ইসলামি গানের মডেল হওয়ায় ঢাবি ছাত্রদল নেতা স্থায়ী ব'হি'ষ্কা'র..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মাত্র ২৩ সেকেন্ডের ভিডিওর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শরীফ উদ্দিন সরকারকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ৭ বছর আগের একটি ইসলামি গানের মডেলিং আজ তার রাজনৈতিক ক্যারি..

‘পদ্মা-মেঘনার গান’, আর তাতেই শেষ এক রাজনৈতিক অধ্যায়!

২০১৮ সালের কথা। একটি ইসলামি থিম সং— ‘পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে’। শুটিংয়ের সময় শরীফ উদ্দিন সরকার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। তখনো রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে জীবন-সংগ্রামের মানুষ ছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হয়ে ওঠেন ছাত্রদলের একজন অন্যতম সংগঠক— ঢাবি শাখার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রদলের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক।

তবে বছর পেরিয়ে সাত। সেই থিম সংয়ের শুটিং ফুটেজ, যেখানে মাত্র ২৩ সেকেন্ড পর একঝাঁক তরুণের সাথে শরীফও মডেল হয়ে দেখা গিয়েছিল একটি মসজিদের সামনে— সেটাই এখন তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

২০২৫ সালের ৩০ জুন (সোমবার), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদল নেতা শরীফ উদ্দিন সরকারকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

যদিও চিঠিতে বহিষ্কারের নির্দিষ্ট কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, ছাত্রদলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, ২০১৮ সালের সেই ইসলামি থিম সংয়ে অংশ নেওয়াই ছিল প্রধান কারণ।

ছাত্রদলের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়,
“ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। দেশের সব পর্যায়ের ছাত্রদল নেতাকর্মীদের শরীফ উদ্দিন সরকারের সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক যোগাযোগ না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

এতদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পর এমন এক বহিষ্কার আদেশ যে শরীফের জন্য এক বিরাট ধাক্কা— তা বলাই বাহুল্য।

এ বিষয়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে শরীফ উদ্দিন সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,
“বহিষ্কারের খবর আমি পেয়েছি। কিন্তু ঠিক কী কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা আমি বুঝতে পারছি না।”

তিনি আরো বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে আমি শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলাম, তবে এরপর আর ছাত্রশিবিরের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ছাত্রদলের হয়ে আমি প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের আগের বড় সব কর্মসূচিতে আমি মাঠে ছিলাম। এমনকি সাম্প্রতিক ‘জুলাই আন্দোলন’-এও আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি।”

২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে’ সংগীতটি ইসলামি ছাত্রশিবিরের একটি ভিডিও, যেটি এখনো ইউটিউবে রয়েছে। প্রায় পাঁচ মিনিটের গানটির শুরুতেই বাংলাদেশের তিনটি বড় নদীর নাম ব্যবহার করে ইসলামী ভাবধারায় যুব সমাজকে আহ্বান জানানো হয়। গান শুরুর ২৩ সেকেন্ড পর ৬ জন তরুণকে একটি মসজিদের সামনের দৃশ্যে দেখা যায়। সেখানে শরীফ ছিলেন সাদা ফরমাল শার্টে।

এই ভিডিওর অস্তিত্ব এবং তাতে শরীফের উপস্থিতিই তার বিরুদ্ধে ‘সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ’-এর অভিযোগ আনে— এমনটাই দাবি করছেন ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো।

ছাত্রদলের এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হচ্ছে, সংগঠনটি বর্তমানে সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচিতি, অতীত সংশ্লিষ্টতা এবং বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি— সব কিছুই বিশ্লেষণ করে দেখছে। এমনকি সাত বছর আগের কার্যকলাপও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হয়ে দাঁড়াতে পারে— সেই বার্তাই যেন দেওয়া হলো এই বহিষ্কারের মাধ্যমে।

অনেকে বলছেন, এটি শুধু শরীফ উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়, বরং ছাত্রদলের জন্য একটি নীতিগত ‘ক্লিন আপ’-এর সূচনা।

No comments found


News Card Generator