কুমিল্লা মহানগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের সময় সম্ভাব্য অরাজকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট জহিরুল হক সেলিমসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হয় বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিবাগত রাতে। সেদিন রাতেই নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকার নিজ বাসা থেকে অ্যাডভোকেট সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর অতীত পরিচয় একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং সরকারি আইনজীবী হিসেবে, যা এই ঘটনা আরও আলোচিত করে তুলেছে।
কারা কারা গ্রেফতার হয়েছেন?
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া বাকি সাতজন হলেন:
-
মুমিনুল ইসলাম, পিতা: মৃত রফিকুল ইসলাম (সুবর্ণপুর)
-
বায়োজিদ সরকার, পিতা: মনিরুল হক (দুলালপুর)
-
আবু সালাম, পিতা: সুরুজ মিয়া
-
একেএম নাছিরুজ্জামান, পিতা: মৃত কামরুজ্জামান
-
শাহজাহান, পিতা: মৃত আলি আকবর
-
ফাহিম, পিতা: সফিকুল সিকদার
-
কামাল হোসেন, পিতা: মমতাজ মিয়া (শাসন গাছা এলাকা)
এরা সবাই কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
ষড়যন্ত্রের অভিযোগের উৎস কী?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (৭ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। বৈঠকে কুমিল্লা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে চলাকালীন, গোপনভাবে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ উঠে—যা ছিল পুরো কুমিল্লা জুড়ে ‘নির্দেশিত বিশৃঙ্খলা’ তৈরি করার একটি অপচেষ্টা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা ক্ষমতার লড়াইয়ের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
পুলিশের বক্তব্য
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন:
“আমরা নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ এবং রাজনৈতিক বৈঠকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
এই ঘটনায় কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের একাংশ বলছে, “এটি ছিল দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টের পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।” অন্যদিকে কিছু নেতার দাবি, “এই গ্রেফতারগুলো হয়তো ভুল বোঝাবুঝির ফল।” যদিও বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন, তবুও এমন ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ও স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভার্চুয়াল বৈঠককে কেন্দ্র করে এত বড় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে সেটি দলীয় শৃঙ্খলার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সঠিক তদন্ত ও স্বচ্ছ বিচার ছাড়া এমন ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে আরও সংকটের জন্ম দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি ভার্চুয়াল বৈঠকের সময় ‘অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা’র অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী এবং সাতজন সহযোগীর ঘটনা কেবল একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বসম্পন্ন ইঙ্গিত। তদন্তের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিকেই এখন তাকিয়ে দেশবাসী।