close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শুনানি ১ জুলাই, আইনজীবী নিয়োগ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যা ও নির্যাতনের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১ জুলাই শুরু হচ্ছে অভিযোগ গঠনের শুনানি। পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবী নিয়োগের ..

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য ও উত্তাল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত গত বছরের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ অবশেষে দৃশ্যমান রূপ নিতে যাচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১ জুলাই

এই মামলাটি চলবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার। তার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৪ জুন) এই সিদ্ধান্ত দেন প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।

যেহেতু প্রধান অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল ট্রাইব্যুনালে এখনো আত্মসমর্পণ করেননি এবং আদালতের আগে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতেও সাড়া দেননি, তাই ট্রাইব্যুনাল থেকে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এদিন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগের আদেশ দিয়েছে।

এই বিষয়ে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অভিজ্ঞ প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি আদালতকে জানান, অভিযুক্তরা পলাতক এবং ইতোমধ্যেই জাতীয় দৈনিক দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হাজিরার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ এনেছে। যার মধ্যে রয়েছে:

  • পরিকল্পিত গণহত্যা

  • অপহরণ ও গুম

  • বেআইনি আটক

  • নির্যাতন

  • সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত সশস্ত্র হামলা

এই অভিযোগগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয় ১ জুন, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করে এবং শুনানির প্রস্তুতি শুরু করে।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থানের জেরে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে ৫ আগস্ট। সরকারের পতনের পরপরই পুনর্গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই ট্রাইব্যুনালেই সর্বপ্রথম যে মামলাটি গৃহীত হয়, তা ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এই মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা — যেটিকে ‘মিস কেস’ হিসেবে ধরা হয়।

এই প্রধান মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি আলাদা মামলা ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে।

১. গুম ও খুনের মামলা — আওয়ামী লীগ শাসনামলে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে যে গুম, খুন ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য দায়ী করে তাকে আসামি করা হয়েছে।
২. শাপলা চত্বরে গণহত্যা মামলা — রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশে সহিংস অভিযানের ঘটনায়ও দায়ের হয়েছে আলাদা মামলা।

এই মামলাগুলোর অনেক তথ্য ও প্রমাণ ইতোমধ্যেই প্রসিকিউশনের হাতে এসেছে বলে জানা গেছে, এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এই মামলার গুরুত্ব ও জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রথম শুনানির দিন বিচারকার্য বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা দেশের বিচারিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে ধরা হচ্ছে।

জনগণের মধ্যে এই মামলাগুলো ঘিরে উচ্চমাত্রার আগ্রহ ও প্রত্যাশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বহু বছর ধরে চলা রাজনৈতিক দমনপীড়নের বিচার এবং গুম-খুনের জবাবদিহিতা এই মামলাগুলোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কি না — এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

যদিও প্রতিপক্ষরা এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলে দাবি করছে, তবুও আদালত বলছে, যথাযথ প্রমাণ ও সাক্ষ্য-নির্ভর বিচারই এই ট্রাইব্যুনালের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শুরু হতে যাওয়া এই বিচার দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বড় বাঁকবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১ জুলাইয়ের শুনানি শুধু একটি মামলার তারিখ নয়, বরং এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা — যেখানে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরাও বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন।

No comments found


News Card Generator