আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে চাঞ্চল্যকর মামলাটির শুনানির পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক বিস্ফোরক দাবি করেন—এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে খালাস দেওয়ার জন্য তাঁর সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।
এই মামলায় তিনজন প্রধান অভিযুক্ত—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও কামাল বর্তমানে পলাতক, এবং তাঁদের হয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম পাঁচটি নির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো:
-
উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান
-
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের দমন
-
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের হত্যা
-
চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা
-
আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়
এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতেই চিফ প্রসিকিউটর আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার অভিযোগ গঠনের আবেদন জানান আজ দুপুরে।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, “আমি মনে করি এই অভিযোগগুলো যথাযথ নয়। এদের সঠিক ভিত্তি নেই। তাই আমি ট্রাইব্যুনালের কাছে ডিসচার্জ (অব্যাহতি) আবেদন করব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করব যেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান ন্যায়বিচার পান।”
এক সাংবাদিক জানতে চান, এমন বড় ধরনের মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আসামিদের অব্যাহতির পক্ষে কথা বলার নজির আছে কি না?
উত্তরে আমির হোসেন বলেন, “নজির নেই। তবে নজির তো যেকোনো সময় তৈরি হতে পারে।”
আইনজীবী আমির হোসেন আদালতকে জানান, তিনি এই মামলার নথিপত্র হাতে পেয়েছেন মাত্র ২৫ জুন। তদুপরি, শারীরিক অসুস্থতার কারণে পুরো প্রস্তুতি নিতে পারেননি।
এই যুক্তিতে তিনি ১৫ দিনের সময় প্রার্থনা করেন, যদিও ট্রাইব্যুনাল তাকে মাত্র ৬ দিন সময় দিয়ে আগামী সোমবার (২৪ জুন) পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
আগামী শুনানিতে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি আদালতে তুলে ধরবে।
আইন ও বিচার বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর পক্ষ থেকে এ ধরনের অবস্থান অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ও নজিরবিহীন।
এটি শুধু মামলার গতি নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনগত পরিমণ্ডলেই একটি বড় আলোড়ন তুলেছে।
এখন পুরো দেশের নজর আগামী সোমবারের শুনানিতে। দেখা যাক, শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত গ্রহণ করে কিনা, নাকি আইনজীবীর আবেদনে আস্থা রেখে খালাস দেয়।