বাংলাদেশে চলমান ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট, এই বিপ্লবের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে দেশত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পালিয়ে যান প্রতিবেশী দেশ ভারতে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশেষ নজরদারি।
যেখানে আগে বাংলাদেশ ছিল ভারতের গণমাধ্যমে প্রায় অনুল্লেখ্য, সেখানে এখন বাংলাদেশ—বিশেষ করে শেখ হাসিনা—কে ঘিরে একের পর এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, শেখ হাসিনাকে যেভাবে ভারতের গণমাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা আগের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং তীব্র।
বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই ভারতের একাংশের মিডিয়া এবং রাজনীতিকদের মধ্যে শুরু হয় নানা গুজব ও অপপ্রচারের জোয়ার। শেখ হাসিনার দেশত্যাগ নিয়ে নানা ধরণের জল্পনা-কল্পনা ছড়ানো শুরু হয়, যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল যাচাই-বাছাইহীন।
তবে সময়ের সাথে সাথে ভারতীয় মূলধারার চারটি সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদপত্র—টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও হিন্দুস্তান টাইমস—তাদের ভাষার ভিন্নতা দিয়ে বুঝিয়ে দিল, শেখ হাসিনাকে নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছেন নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস উইংয়ের প্রধান ফয়সাল মাহমুদ। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে তুলে ধরেন ভারতীয় গণমাধ্যমের অবস্থান বদলের পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্র।
তার পোস্ট অনুযায়ী
-
শুরুতে শেখ হাসিনাকে বলা হতো "প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী
-
পরে বলা হতে থাকে "অপসারিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী
-
আর এখন সেই শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে "পলাতক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী
এই শব্দচয়নের রূপান্তরই বলে দেয়, শেখ হাসিনাকে ঘিরে ভারতের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সবসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে দৃষ্টি রাখে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং গণবিক্ষোভের লাগাতার ধারাবাহিকতা ভারতের রাজনীতিতেও একধরনের বার্তা বহন করছে। ফলে ভারতের প্রধান গণমাধ্যমগুলো বাধ্য হয়েছে শেখ হাসিনাকে ঘিরে নতুন করে ভাবতে ও বিশ্লেষণ করতে।
এছাড়া, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে ‘জনগণের প্রতি সমর্থন’ এবং ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। সে প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে ‘পলাতক’ আখ্যা দেওয়া একপ্রকার রাজনৈতিক বার্তাও হতে পারে।
তার পোস্টের শেষাংশে ফয়সাল মাহমুদ লেখেন
পরিবর্তনের ধারাটি খারাপ নয়।
অর্থাৎ ভারতীয় গণমাধ্যমের এই অবস্থান পরিবর্তন, বিশেষ করে নেতিবাচক হলেও, এটি একটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ বলেই মনে করছেন তিনি। তবে অনেকেই বলছেন, এটি শুধুই সাংবাদিকতা নয়—এখানে ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতিফলনও স্পষ্ট।
শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অধ্যায় নন, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনায়ও এক বিতর্কিত চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তা-ই প্রমাণ করে।
“পলাতক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী” আখ্যাটি কেবল একটি উপাধি নয়—এটি এক গভীর রাজনৈতিক বার্তা, যা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে বিশ্ব দরবারে ভিন্ন চোখে দেখার ইঙ্গিত দেয়।



















