ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ঘিরে জেনেভা শান্তি আলোচনা, কিন্তু মাটির নিচে চাপা আগুনের গন্ধ পাচ্ছেন সবাই!
দুনিয়া যখন শান্তির পথে হাঁটার স্বপ্ন দেখছে, তখন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আঁচ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিশ্ব রাজনীতির দিগন্তে নতুন এক অশনি সঙ্কেত তৈরি করেছে। একদিকে চলছে জেনেভায় বহু কাঙ্ক্ষিত শান্তি আলোচনা, আর অন্যদিকে ইসরায়েল ঝড়ের মতো আঘাত হানছে ইরানের অভ্যন্তরে—হত্যা করছে পরমাণুবিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাদের।
এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে: শান্তির ডাকে সত্যিই শান্তি আসছে, নাকি এই ডাকের আড়ালেই জন্ম নিচ্ছে আরও ভয়াবহ যুদ্ধ?
গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলা ও গুপ্তচরবৃত্তিমূলক অপারেশনে ইরান প্রচণ্ড চাপে পড়েছে। দেশটির একাধিক সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু ইরান থেমে থাকেনি। তারা এখনও মাটির প্রায় অর্ধমাইল নিচে থাকা 'ফোরদো' পারমাণবিক স্থাপনাটি অক্ষত রেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেই গোপনে চলছে পরমাণু কর্মসূচির শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এটি একমাত্র অবলম্বন। তারা মনে করেন, পরমাণু শক্তি অর্জন ছাড়া ইরানের সরকারের টিকে থাকা সম্ভব নয়। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের লক্ষ্য—এই সরকারকে উৎখাত করা এবং ইরানকে পরমাণুশূন্য রাখা।
এই পরিপ্রেক্ষিতে জেনেভায় শান্তি আলোচনায় বসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। উদ্দেশ্য—ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখা। কিন্তু সমস্যার মূল জায়গাটি অন্যখানে।
ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না ইসরায়েল হামলা বন্ধ করে, তারা আলোচনায় বসবে না। অথচ ইসরায়েল বরাবরের মতোই আগ্রাসী অবস্থানে থেকে যাচ্ছে। তাই শান্তি আলোচনার কার্যকারিতা নিয়ে উঠছে বড় প্রশ্ন।
সম্প্রতি ইরানে একটি মাঝারি মাত্রার ভূকম্পন হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটি প্রকৃতির ঘটনা হলেও, এর পেছনে থাকতে পারে গোপন পারমাণবিক বিস্ফোরণের ইঙ্গিত। এমন গুজব আরও আতঙ্ক বাড়িয়েছে—বিশ্ব কি তাহলে ধীরে ধীরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে হাঁটছে?
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘জেবিইউ-৫৭’ নামের এক ভয়ংকর বোমা রয়েছে, যা ফোরদোর মতো বাংকার ধ্বংস করতে সক্ষম। এই অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাও আলোচনায় এসেছে। তবে সফলতা কতটা নিশ্চিত, তা কেউ বলতে পারছে না। বরং ব্যর্থ হামলার পরিণাম হতে পারে মারাত্মক—ইরান পাল্টা পরমাণু প্রতিশোধ নিতে পারে, যা পুরো অঞ্চলকে আগুনে ভরিয়ে দেবে।
এই সুযোগে রাশিয়া আবার কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ইরানকে আলোচনায় বসাতে চায়। লক্ষ্য একটাই—যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া। রাশিয়ার কূটনৈতিক জাগরণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য আবারও পরিবর্তনের পথে।
যুদ্ধ চলছে, আবার একসঙ্গে চলছে শান্তির আলোচনা। বাস্তবে এক অদ্ভুত দ্বৈততা তৈরি হয়েছে। কোথাও কেউ জানে না—কে সত্যিকার শান্তি চায়, আর কে যুদ্ধকে ব্যবহার করছে কূটনীতির ছদ্মবেশে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে এই অঞ্চল শুধু নয়, পুরো বিশ্ব এক অজানা আগুনে পুড়ে ছাই হতে পারে। শান্তির ডাক যতটা আশাব্যঞ্জক, তার ভেতর লুকিয়ে থাকা রাজনীতি ততটাই ভয়ংকর।
বিশ্ববাসী এখন এক দ্বিধার মধ্যে দাঁড়িয়ে। একদিকে আছে শান্তির প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে যুদ্ধের বাস্তবতা। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যদি এখানেই না থামে, তাহলে পৃথিবী হয়তো এক নতুন যুদ্ধের গন্তব্যে পৌঁছে যাবে—যেখানে আর কোনো শান্তির ডাক শোনা যাবে না, শুধু ধ্বংসের আর্তনাদ।