close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী রাকায়েত হোসেনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদলের অভিযোগ—তিনি ভিন্নমত দমন ও পুনরায় সংগঠন গঠনের চেষ্টা করছিলেন।..

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরাসরি পুলিশে সোপর্দ করেছে ছাত্রলীগের এক নিষিদ্ধঘোষিত কর্মীকে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় থেকে ওই ছাত্রকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আটক শিক্ষার্থীর নাম রাকায়েত হোসেন, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দক্ষিণপুর এলাকার জানখারটেক গ্রামে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাকায়েত দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। তবে বর্তমান প্রশাসন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় তাঁকে ‘অবৈধভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা’ এবং ‘ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের’ অভিযোগে আটক করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ক্লাস শেষে রাকায়েত হোসেন নতুন সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের নিচে অবস্থান করছিলেন। তখন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী তাঁকে ঘিরে ধরে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় প্রায় আধাঘণ্টা। এরপর বিকেল ৩টার দিকে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. সোহাগ বলেন, “রাকায়েত হোসেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তিনি হলে ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছেন। এমনকি প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তিনি নিষিদ্ধ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাই প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসেবে তাঁকে প্রক্টর অফিসে আনা হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোখলেসুর রহমান জানান, “কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগের ভিত্তিতে রাকায়েতকে অফিসে নিয়ে আসে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখেছি এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পুলিশে হস্তান্তর করি। এখন বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।”

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা কোনো নিষিদ্ধ বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকে সহ্য করব না। সকল শিক্ষার্থীকে নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন মিত্র বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে একজন শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা তাঁর পরিচয় ও অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখব। যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা আইনভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালাবো।”

উল্লেখ্য, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে থেকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রশাসনিক নির্দেশে। তবে এরপরও অনেক নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাকায়েত হোসেনকে চিহ্নিত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বরাবরই উত্তপ্ত। বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে বিভাজন এবং দ্বন্দ্ব প্রায় সময়ই সহিংসতায় রূপ নেয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার সতর্কবার্তা দেওয়ার পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

এই ঘটনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল—কোনো দলীয় পরিচয় বা প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা হবে। ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাস, দমন-পীড়ন কিংবা শৃঙ্খলা ভঙ্গ—কোনোটাই সহ্য করা হবে না। এখন দেখার বিষয়, পুলিশের তদন্তে কী উঠে আসে এবং রাকায়েত হোসেনের ভাগ্যে কী রয়েছে।

No se encontraron comentarios


News Card Generator