রাজধানী ঢাকার শাহবাগে আজ শনিবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে এক নজিরবিহীন গণজমায়েত। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মী। মিছিল, স্লোগান আর বক্তব্যে মুখর শাহবাগ এখন রূপ নিয়েছে রাজনৈতিক প্রতিরোধের এক উত্তাল কেন্দ্রে।
বেলা তিনটার কিছু পর থেকেই একে একে সংগঠনগুলো শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে শুরু করে। প্রত্যেক দল নির্দিষ্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের দেখা যায় পূবালী ব্যাংকের সামনে সংগঠিত অবস্থায়। তাদের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো’, ‘স্বৈরাচার হটাও’ ইত্যাদি।
অন্যদিকে, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদের নেতৃত্বে একদল কর্মী পুলিশ বক্সের সামনে অবস্থান নেয়। এই অংশে বক্তৃতা চলছিল। বক্তব্যে আওয়ামী লীগের “অবৈধ ক্ষমতা দখল”, “নির্বাচন ব্যবস্থার ধ্বংস” এবং “জনগণের ভোটাধিকার হরণের” বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়।
লেখক শামসুল আরেফিন শক্তি এবং তার অনুসারীদের দেখা গেছে শাহবাগ মোড়ের বিজ্ঞাপন বোর্ডের সামনে। তাদের উপস্থিতি সাহিত্যের সাথে রাজনীতির এক ভিন্নধর্মী সংমিশ্রণের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শামসুল আরেফিন শক্তি সরাসরি বলেন, "এ লড়াই শুধু রাজনৈতিক নয়, এটা বিবেকের লড়াই।"
এই গণজমায়েতের মূল আহ্বায়ক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ইতোমধ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব নেন। এ সময় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতে দেখা যায়।
স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ:
শাহবাগ মোড়ে স্থাপিত মাইকিং সিস্টেম থেকে টানা স্লোগান প্রচারিত হচ্ছে। কিছু স্লোগান ছিল সরাসরি রাজনৈতিকভাবে আক্রমণাত্মক এবং তীব্র।
কিছু জনপ্রিয় স্লোগান হল:
-
"আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে!"
-
"লীগ ধর, জেলে ভর!"
-
"দফা এক দাবি এক—লীগ নট কাম ব্যাক!"
-
"এক দুই তিন চার, চুপ্পু তুই গদি ছাড়!"
-
"দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা!"
এসব স্লোগান আন্দোলনের আবেগ ও রাজনৈতিক বার্তা দুই-ই স্পষ্ট করে তুলেছে। মাইক থেকে বারবার আওয়ামী লীগের "নিবন্ধন বাতিলের" দাবি তুলে ধরা হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পুলিশের ভূমিকা:
আপাতত শাহবাগে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও সরাসরি কোনো বাধা দেওয়া হয়নি প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত। তবে আশপাশের এলাকায় টহল বেড়েছে, এবং যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। নিরাপত্তাবাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।
শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে?
সন্ধ্যার দিকে আরও সংগঠনের যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি হবে আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি নতুন ধাপ। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে এবং জনগণের কণ্ঠ রোধ করে রেখেছে।
এই প্রতিবাদের মাধ্যমে তারা সরকারের বিরুদ্ধে এক সুসংগঠিত বার্তা পৌঁছে দিতে চায়।