রাজধানীর ব্যস্ততম ও অভিজাত এলাকাগুলোর একটি আগাসাদেক রোড। দিনের আলোয় যেখানে ভদ্র পোষাকে ব্যস্ত নগরজীবন, সন্ধ্যার পর সেখানে দোকানের আড়ালে চলত ভয়াবহ মাদক কারবার। তবে এবার সেই গোপন সাম্রাজ্য ভেঙে দিল সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৭ মে) মধ্যরাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেডের আওতাধীন ৫ বীর সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর আগাসাদেক রোডে অভিযান চালায়। মাত্র এক ঘণ্টার এই সফল অভিযানে ৫টি দোকানে হানা দিয়ে সেনাবাহিনী ১ হাজার ৯৭৮ বোতল সালসা, একটি মোটরসাইকেল এবং ১০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে।
মাদক ব্যবসার চার বছরের ইতিহাস
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা স্বীকার করে, তারা প্রায় চার বছর ধরে এই অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। রাজধানীর কেরানিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সালসা জাতীয় মাদকদ্রব্য পাইকারি দামে সংগ্রহ করে তারা এগুলো দোকানে এনে বিক্রি করত। সন্ধ্যার পর দোকানগুলো হয়ে উঠত একেকটি মাদক সেবনের আখড়া।
দুধের সঙ্গে মেশানো হতো সালসা, ছিল ব্লেন্ডারও
জানা যায়, মাদক বিক্রির পদ্ধতিও ছিল অভিনব। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে এবং সেবন সহজ করতে তারা সালসা মাদকদ্রব্য দুধের সঙ্গে মিশিয়ে দিত। এজন্য দোকানগুলিতে বিশেষভাবে রাখা ছিল ব্লেন্ডার মেশিন। দেখতে যেন সাধারণ একটি খাবারের দোকান, অথচ ভিতরে ছিল মাদকের ভয়াবহ কারখানা।
তরুণদের ফাঁদে ফেলা হতো সচেতনভাবে
অভিযানে অংশ নেওয়া সেনা কর্মকর্তারা জানান, এসব দোকানে মাদক সেবনের জন্য যারা আসত, তাদের অধিকাংশই ছিল অল্পবয়সী তরুণ। একদিকে সামাজিক অবক্ষয়, অন্যদিকে সচেতনভাবে তরুণদের এই নেশায় ফেলা হচ্ছিল। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার স্বার্থে এই অভিযান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে নিয়মিত
সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এমন আরও অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যেখানে মাদকের আড়ালে সমাজ ধ্বংস হচ্ছে, সেখানেই আমাদের উপস্থিতি থাকবে।”
জনমনে স্বস্তি, প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে
এই বিশেষ অভিযানের পর স্থানীয় বাসিন্দারা সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন এবং জানান, এতদিন তারা টেরই পাননি যে এতটা কাছেই এমন একটি ভয়ংকর মাদকের জাল বিস্তার করেছে। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এতদিন প্রশাসনের চোখ এড়ায় কীভাবে? দোকানপাট নিয়মিত চলছিল, সন্ধ্যায় জমজমাট ভিড়—তবুও পুলিশের নজরে আসেনি?
রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আগাসাদেক রোডের মতো এলাকায় যদি এমন মাদকের ঘাঁটি গড়ে ওঠে এবং তা চার বছর ধরে নির্বিঘ্নে চলে, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়—আর কোথায় কোথায় এমন ব্যবসা চলছে? সেনাবাহিনীর এই অভিযান নতুন করে উদ্বেগের পাশাপাশি এক ধরনের আস্থা ও আশাও সৃষ্টি করেছে—দেশে মাদকবিরোধী লড়াই এখন আরও দৃঢ় হোক।