সেই পাপিয়ার ৪ বছরের কারাদণ্ড

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাজনীতির ছায়ায় গড়ে ওঠা অপরাধচক্রের এক ভয়ংকর নাম ছিল শামিমা নূর পাপিয়া। আজ ঢাকার বিশেষ আদালতের রায়ে সেই অধ্যায়ের নিষ্পত্তি ঘটল। মানিলন্ডারিং মামলায় পাপিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ক..

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত অবশেষে রায় ঘোষণা করল বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত শামিমা নূর পাপিয়ার বিরুদ্ধে। যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়াকে মানিলন্ডারিং আইনে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাভোগ করতে হবে।

রবিবার, ২৫ মে, সকাল ১১টার দিকে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। এই মামলায় অভিযুক্ত আরও চারজন ছিলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দেন। মামলার রায়ে পাপিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তার অপরাধ জগতের ভয়ঙ্কর চিত্র আবারও সামনে আসে।

গোড়ার ইতিহাস: কীভাবে ধরা খেলেন পাপিয়া?

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তাদের লাগেজ তল্লাশি করে পাওয়া যায় নগদ অর্থ, বিদেশি মুদ্রা ও অবৈধ মালামাল। সেই থেকেই শুরু হয় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁসের পালা।

তদন্তে উঠে আসে, রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি সুসংগঠিত অপরাধ চক্র। ঢাকার অভিজাত হোটেলগুলোতে পরিচালিত হতো ভয়াবহ রকমের অপরাধ কর্মকাণ্ড—যার মধ্যে ছিল নারী পাচার, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং কোটি কোটি টাকার মানিলন্ডারিং।

অপরাধচক্রের স্বরূপ: কীভাবে চলত তাদের রাজত্ব?

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়ার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয় এবং উচ্চপর্যায়ের সংযোগকে পুঁজি করেই চলত এই অপরাধচক্র। হোটেল বুকিংয়ের আড়ালে চলত দেহ ব্যবসা ও বিদেশি নাগরিকদের ব্ল্যাকমেইলিং। তার নেতৃত্বাধীন চক্রটি বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার করত বিদেশে।

আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী, পাপিয়ার অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন ছিল, যা তার আয় ও সম্পদের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য: দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, “শুধু আর্থিক নয়, সামাজিকভাবে বড় একটি ক্ষতির কারণ এই অপরাধচক্র। এ ধরনের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সমাজে ভুল বার্তা পৌঁছাবে।”

বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেন, “আসামি তার রাজনৈতিক পরিচয়কে অপরাধ কর্মকাণ্ডের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ কারণে তাকে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া যায় না।”

রাজনীতির মুখোশে অপরাধ: জনমনে প্রশ্ন

পাপিয়ার ঘটনাটি দেশে রাজনৈতিক দুর্নীতির চরম উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল রাজনৈতিক আশ্রয়ে কীভাবে কেউ রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে পারে, তার বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে এই মামলায়।

বিচার হলো, এখন নজর ভবিষ্যতের দিকে

এই মামলার রায়ে দেশের মানুষ একধরনের স্বস্তি পেলেও জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই ধরনের আরও কত ‘পাপিয়া’ এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে? আর রাষ্ট্র কতটা প্রস্তুত এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে?

অন্তত এই রায় একটি বার্তা দিয়েছে—প্রভাব ও পরিচয় যতই শক্তিশালী হোক, অপরাধের সাজা একদিন ঠিকই আসে।

Tidak ada komentar yang ditemukan