দেশের সড়ক, নৌ, বিমান ও রেল বিভাগ একত্রে একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা উচিত বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন। তিনি বলেন, এই চারটি বিভাগকে সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় দরকার, যেখানে পরিকল্পনা, ডিজাইন ও বাস্তবায়ন একসঙ্গে করা সম্ভব হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের (পিআরআই) বাজেট পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ মইনউদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার। উপস্থিত ছিলেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ার রাহমান সহ অন্য অতিথিরা।
শেখ মইনউদ্দিন বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় সড়ক, সেতু ও রেল বিভাগের মধ্যে কাজের ধরণ আলাদা আলাদা এবং অনেক সময় বিলম্ব ঘটে। ক্রয় প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের অনুমোদন থেকে নির্মাণ শুরু করতে চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এতে করে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায় এবং প্রকল্পে পরিবর্তন আসতে পারে। তাছাড়া, প্রতিটি বিভাগ নিজের পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকায় দেশের পরিবহন খাতে সমন্বয়হীনতা বিরাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যখন ঢাকার সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করি, দেখি এখানে অনেক সংস্থা জড়িত – দুটি সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, হাইওয়ে পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবহন মালিক সমিতি – যার কারণে সড়ক ব্যবস্থাপনা খুব জটিল। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন খাতের চেয়েও এখানের পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল।”
শেখ মইনউদ্দিন দাবি করেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হলে পরিকল্পনা ও কৌশলনির্মাণে অভিজ্ঞ ও দক্ষ নেতৃত্ব থাকা প্রয়োজন। তিনি খুলনা জেলার উদাহরণ দিয়ে বলেন, “খুলনায় সেতু রয়েছে কিন্তু সড়ক নেই, যার ফলে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এটা সমন্বয়ের অভাবের প্রমাণ।”
সভায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ার রাহমান ব্যবসায়িক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং কর্মসংস্থান কমে গেছে। সুদের হার বেড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যার কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যয় কমানোর চেষ্টা করলেও সরকার রাজস্ব ব্যয় বাড়িয়ে ব্যবসার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। কর কর্মকর্তাদের কমিশন নিয়ে কথাবার্তা বৈষম্যমূলক।”
সমগ্র আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে, দেশের পরিবহন খাতের সুষ্ঠু ও সমন্বিত উন্নয়নের জন্য একক মন্ত্রণালয় গঠন অপরিহার্য। এতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কার্যকর করা সহজ হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুততা আসবে। পাশাপাশি, ব্যবসায়ীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, যা অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি করবে।