স্বাধীনতার আওয়ামী বয়ান বিলুপ্তিতে একমত বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি – নতুন রাজনৈতিক জোটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি এখন একমত হয়েছে স্বাধীনতার "আওয়ামী বয়ান" বিলুপ্তির প্রস্তাবে, যা সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আওতায় এসেছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিতে পারে।..

স্বাধীনতার ‘আওয়ামী বয়ান’ বিলুপ্তিতে একমত বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে স্বাধীনতার "আওয়ামী বয়ান" বিলুপ্তির প্রস্তাব। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পর্যালোচনার পর বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি এই প্রস্তাবে একমত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই তিনটি দলের মতামত সংবিধান সংস্কারের বর্তমান প্রক্রিয়ার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি নিয়ে।

কমিশনের স্প্রেডশিটের সর্বশেষ ‘বিবিধ’ কলামে রাজনৈতিক দলের মতামত পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, "সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) বিলুপ্ত, এবং এ সংশ্লিষ্ট ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম তফসিল সংবিধানে না রাখা।" এই প্রস্তাবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি সম্মত হয়েছে। এই প্রস্তাবের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র, এবং মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংক্রান্ত উল্লেখ সংবিধান থেকে বাদ পড়তে পারে।

১৫০ (২) অনুচ্ছেদ কি ছিল?

বর্তমান সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ, ২৬শে মার্চ, এবং ১০ই এপ্রিলের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর উল্লেখ সংবিধানে করা হয়েছে। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মতো ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষিত ছিল। তবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি এই অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি চাচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক মহলে এক নতুন আলোচনার সূচনা করেছে।

সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়া

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সংগ্রহ করে সুপারিশ দিয়েছে। এতে মোট ৭০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, যেখানে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি সম্মত হয়েছে চারটি প্রস্তাবে। এছাড়া, কমিশনের সুপারিশে রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার প্রস্তাবও এসেছে, যা তিনটি দল সম্মত হয়েছে।

এই প্রস্তাবগুলো, বিশেষ করে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন পর্যালোচনা ও আলোচনা উত্থাপন করতে পারে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এসব পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

জাতির কাছে এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব

এখন প্রশ্ন হলো, এই সংবিধান সংস্কারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাবে, এবং যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে সংস্কারের কাজ করা হবে। কমিশন যদি আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে, তবে জাতীয় সংসদে সংশোধন প্রস্তাবিত হবে।

বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির মতামত ঐকমত্যের মাধ্যমে সরকারের কাছে পৌঁছালে, তা সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও তাদের মতামত প্রকাশ করতে শুরু করেছে, এবং সামনে আরও আলোচনা হতে পারে।

কমিশন ও তাদের সুপারিশ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে মোট ১৬৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি প্রস্তাব সংবিধান সংশোধন, ২৭টি নির্বাচনব্যবস্থা, ২৩টি বিচার বিভাগ, ২৬টি জনপ্রশাসন এবং ২০টি দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কিত। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সংস্কার করা হবে।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর, সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে। এই সুপারিশগুলি দেশের ভবিষ্যত গঠনে ভূমিকা রাখবে, এবং সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলের চাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

নতুন রাজনৈতিক জোটের গঠন

এমনকি, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই পরিবর্তনগুলি আরও বড় ধরনের রাজনৈতিক জোটের জন্ম দিতে পারে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির একমত হওয়া একটি সিগন্যাল যে, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংবিধান সংশোধনে প্রভাব রাখতে চাচ্ছে। তাদের একমত হওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে নতুন মোড় দিতে সক্ষম।

কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ

কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে রাজনৈতিক দলের সাথে আরও আলোচনা ও সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নতি এবং দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

এভাবে, আগামী দিনগুলোতে এই কমিশনের সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

کوئی تبصرہ نہیں ملا