মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা আরও এক ধাপ বেড়ে গেল। ১৯ জুন, বৃহস্পতিবার সকালবেলায় যখন শহরগুলো ধীরে ধীরে জেগে উঠছিল, তখনই আকাশভেদী গর্জনে কেঁপে উঠল ইসরায়েল। ইরান হঠাৎ করে ছুড়ে দিল একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলোর লক্ষ্যবস্তু ছিল তেল আবিব, জেরুজালেম এবং দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা ইরান থেকে উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করেছি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।”
আইডিএফ আরও জানায়, সাম্প্রতিক এই হামলা ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তায় এক বড় হুমকি তৈরি করেছে, তাই জনগণকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন তারা সরকার নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং নতুন নির্দেশনার আগ পর্যন্ত বাইরে না আসে।
জেরুজালেম পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ইরান থেকে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ ইসরায়েলের বীরশেবা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে সরাসরি আঘাত হানে। যদিও হাসপাতালে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো নিশ্চিত করা হয়নি, তবে কর্তৃপক্ষ সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
ইসরায়েলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে বিস্ফোরণের পরপরই সেখানে চিকিৎসক, নিরাপত্তাকর্মী ও জরুরি সেবাদানকারী বাহিনী ছুটে গেছেন। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এত দ্রুত ও হঠাৎ নিক্ষিপ্ত হয়েছে যে, অনেক এলাকাতেই সতর্কবার্তা পৌঁছানোর আগেই বিস্ফোরণ ঘটে যায়।
আল জাজিরা এবং টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, এই হামলায় কমপক্ষে ২০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান, যার মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তবুও বহু ক্ষেপণাস্ত্র নির্ধারিত লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে।
তেলআবিব, রামলা, নেস জিওনা এবং হোলোন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রাস্তায় নেমে এসেছে, কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে ঢোকার সময় আহত হয়েছেন বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলে এক রকম শোরগোল পড়ে গেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে এই হামলার প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ঘটনা এখন আর কেবল ইসরায়েল-ইরানের মধ্যকার বিরোধ নয়, বরং গোটা অঞ্চল জুড়ে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উস্কে দিচ্ছে।”
জাতিসংঘ মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
এই হামলা সম্পর্কে ইরান সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও, এর আগেই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “ইরান কারো চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ কিংবা শান্তি মেনে নেবে না। কেউ আমাদের দিকে বন্দুক তাক করলে, আমরা গর্জে উঠবো।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের জবাব হিসেবেই হয়তো এই হামলা চালানো হয়েছে, যদিও সরাসরি কোনো সংযুক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এখন প্রশ্ন হলো—এই ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কী হবে? কি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে? গোটা মধ্যপ্রাচ্য আরেকবার এক ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে কি না—এই প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, ১৯ জুনের এই সকাল শুধুমাত্র ইসরায়েলের নয়, বরং সারা বিশ্বের কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের চোখ খুলে দিয়েছে।