close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সাতক্ষীরায় প্রায় ২২ কোটি টাকার মা দ ক জ ব্দ

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: avatar   
সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় মাদক ঢুকছে স্রোতের মতো- দিনে রাতে, স্থলপথে ও নদীপথে..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা: 

সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় মাদক ঢুকছে স্রোতের মতো- দিনে রাতে, স্থলপথে ও নদীপথে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি মাঝেমধ্যে কোটি টাকার মাদক আটক করলেও বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। ধরা পড়ছে কেবল দৃশ্যমান অংশ, ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল সিন্ডিকেট। দেশের পশ্চিম সীমান্তের এ জেলা এখন আর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল নয়-পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম বড় মাদক করিডোরে।

জেলার ভোমরা, কাকডাঙ্গা, ঝাউডাঙ্গা, মাদরা ও রইচপুর-এই সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে নিয়মিত প্রবেশ করছে আইস, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও ভারতীয় মদ। বিস্তীর্ণ সীমান্ত, জঙ্গল, নদী ও জনবসতিকে ঢাল বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে মাদক চোরাচালান চক্র।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর '২৫) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি)-এর ব্যাটালিয়ন সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে সদর উপজেলার রইচপুর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালায় বিজিবি। অভিযানে মালিকবিহীন অবস্থায় ৪ কেজি ২৫০ গ্রাম আইস (মেথামফেটামিন), ৪০ বোতল উইনসারেক্স (Wincerex) সিরাপ এবং একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা।

বিজিবি সূত্র জানায়, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল থামানোর সংকেত দিলে সে মোটরসাইকেল ও সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ফেলে যাওয়া ব্যাগ ও মোটরসাইকেল তল্লাশি করে এসব মাদক উদ্ধার করা হয়।

সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী আশিকুর রহমান জানান, জব্দকৃত মালামালের বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পরবর্তীতে জনসম্মুখে ধ্বংসের লক্ষ্যে এসব মাদকদ্রব্য ব্যাটালিয়নের সিজার স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি) একাধিক বড় মাদক চালান জব্দ করলেও সংশ্লিষ্টদের মতে, এগুলো মোট প্রবাহের সামান্য অংশ মাত্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজিবির অভিযানের সময় চোরাকারবারীরা পালিয়ে যায়, আর গডফাদাররা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায় রাজনৈতিক ছত্রছায়া, সীমান্তের দুই পাশের যোগসাজশ এবং অর্থপাচারনির্ভর শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব। নাম জানা থাকলেও এসব সিন্ডিকেটের হোতারা খুব কম ক্ষেত্রেই আইনের আওতায় আসে। সহজ আয়ের লোভে সীমান্ত এলাকার বেকার তরুণরা ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে মাদক বহনে। আজ বাহক, কাল নেশাগ্রস্ত-এই চক্রে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে একটি প্রজন্ম। এদিকে বিজিবি, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাবও স্পষ্ট। জব্দ ও মামলা হলেও বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদকের প্রভাবে সীমান্ত এলাকাসহ জেলা জুড়ে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ।

জেলার সচেতন মহলের দাবি, সীমান্তে প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি জোরদার, বড় সিন্ডিকেটের আর্থিক উৎসে আঘাত, রাজনৈতিক পরিচয় উপেক্ষা করে কঠোর অভিযান এবং একটি যৌথ গোয়েন্দা টাস্কফোর্স গঠন এখন সময়ের দাবি।

মাদক এখন আর সীমান্ত অপরাধ নয়- এটি সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি। এখনই কঠোর ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত না এলে সীমান্ত জেলা নয়, পুরো দেশই মাদকের করিডোরে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Geen reacties gevonden


News Card Generator