বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলেও, এটি বর্তমানে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও ক্ষমতামুখী বিভিন্ন সমস্যা সাংবাদিকতার স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
শনিবার বিকেলে বগুড়ার সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আজও কোনো কার্যকর আইন নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ সেলফ সেন্সরশিপে চলে যাচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য। তিনি প্রশ্ন করেন, "সাংবাদিকতা কি অপরাধ? জনস্বার্থে তথ্য অনুসন্ধান এবং তা প্রকাশ করতে গিয়ে কেন সাংবাদিকরা 'অপরাধী' হিসেবে চিহ্নিত হবেন?"
বিএফইউজে মহাসচিব আরও বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখতে হলে সত্য তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকে, তবে সঠিক তথ্যের প্রকাশ সম্ভব হয় না, এবং এক্ষেত্রে জনমানুষের আস্থা কমে যায়। তিনি বলেন, "সাংবাদিকদের বিবেকের মাধ্যমে কাজ করতে হবে এবং অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস পরিহার করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা। আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ভুয়া খবর বা প্রোপাগান্ডা খুব সহজে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করে, যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা কমে যায়।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তির কারণে তারা অনেক সময় ভয়ভীতি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, আগে সাংবাদিক ইউনিয়ন শক্তিশালী ছিল, তবে বর্তমানে ঐক্যহীনতার কারণে সাংবাদিকদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংকটের উত্তরণে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, "সাংবাদিকরা যদি তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে না পারেন, তবে সমাজে অস্থিরতা বাড়তে থাকবে। সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো সত্য তুলে ধরা এবং সে সত্যকে রক্ষা করা।"
এদিকে, বিএফইউজে মহাসচিব আরও বলেন, এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সাংবাদিকরা দমে যেতে পারেন না। সাংবাদিকদের মোটা বেতন নেই, ঈদ-পূজায় বোনাসের নিশ্চয়তা নেই, অবসরের পর পেনশন নেই, এবং ছুটি নেওয়ার সুযোগও নেই। এর পরও তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে যেখানে রাষ্ট্রের দমন-পীড়ন ছিল, সেখানে সাংবাদিকরা চিন্তাশীল মানুষদের বার্তা সমাজে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন। সাংবাদিকরা সমাজের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করেন, এবং তাদের কাজের মাধ্যমে সত্যের সন্ধান পাওয়া যায়।
বগুড়ার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি গণেশ দাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মির্জা সেলিম রেজা, বগুড়া প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক ওয়াসিকুর রহমান বেচাল, সদস্য সচিব সবুর শাহ লোটাস, আবদুল ওয়াদুদ, মমিনুর রশিদ শাইন, আবদুর রহিম, সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার, মতিউল ইসলাম সাদি, মাহফুজ মন্ডল, মোস্তফা মোগলসহ আরও অনেকেই।