close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

সাড়ে ৫ ঘণ্টা ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণে বাস, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভয়াবহ বাস ডাকাতি! রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বাস নিয়ন্ত্রণে রেখে যাত্রীদের চোখ-মুখ বেঁধে সর্বস্ব লুট করে ডাকাত দল। নারী যাত্রীদের সাথে ঘটে অশ্লীল আচরণ। পুরো ঘটনা যেন সিনে..

৫ ঘণ্টা বাস জিম্মি, ছুরি-চাপাতির মুখে নারীদের শ্লীলতাহানি ও যাত্রীদের সর্বস্ব লুট: পুলিশ বলছে ‘তীব্র নজরদারি’ চলছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ মে, টাঙ্গাইল

ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে আবারও এক ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যা রাতজাগা আতঙ্ক হয়ে নেমে আসে বাসের ৪৫ যাত্রীর উপর। মঙ্গলবার (২০ মে) রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয়ে পরদিন ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত একটানা ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এই নির্মম ঘটনা। এই সময়ের মধ্যে ছদ্মবেশী ডাকাত দল ছুরি, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্রের মুখে একটি যাত্রীবাহী বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যাত্রীদের নগদ টাকা, মোবাইল, সোনার অলঙ্কারসহ সব কিছু লুট করে নেয়। নারীদের সাথে ঘটে চরম অশালীন আচরণ। পুরো ঘটনার বর্ণনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে দেশবাসী।

বাসটির নাম আল ইমরান পরিবহন, যা মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে রংপুরগামী যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে সাভারের নরসিংহপুর, বাইপাইল ও আশুলিয়া থেকে বেশ কিছু যাত্রী ওঠেন। তাদের মধ্যেই ৮ থেকে ১০ জন ছিল ছদ্মবেশী ডাকাত, যাদের পরিকল্পনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পেরিয়ে যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে পৌঁছানোর পরই এই ডাকাত দল চালকের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় বাসটির।

চালক আবেদ আলী জানান, “সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যায় যে আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। ওরা বলেছিল, চুপচাপ থাকলে জান বাঁচবে, না হলে মরতে হবে।”

বাসের অন্যান্য যাত্রী জানান, ডাকাতরা বাসটি যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে ঘুরিয়ে পুনরায় ঢাকার দিকে নিয়ে যায়। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তারা বাসটি ৪ থেকে ৫ বার টাঙ্গাইল ও সাভারের আশুলিয়া, চন্দ্রা এলাকা ঘুরিয়ে আবার আবার রুট পরিবর্তন করে। প্রতিবারই নতুন জায়গায় নিয়ে গিয়ে যাত্রীদের শরীর তল্লাশি করে, মোবাইল, টাকা-পয়সা, সোনা-দানা, ব্যাগপত্র ছিনিয়ে নেয়।

এই চক্রের নির্মমতা এখানেই শেষ হয়নি। নারী যাত্রীদের ওপর চালানো হয় শ্লীলতাহানিমূলক আচরণ। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, ‘তল্লাশির’ নামে ডাকাতরা নারীদের গায়ে হাত দেয়, বাজে কথা বলে ও ভয়ভীতি দেখায়। তাদের চোখেও বেঁধে দেওয়া হয় কাপড়, যাতে তারা কিছুই চিনতে না পারে।

চরম আতঙ্কের মধ্যে থাকা এক নারী যাত্রী বলেন, “ওরা আমার গলার সোনার হার খুলে নেয়, শরীর তল্লাশি করে এমনভাবে যে কিছু বলার মতো শক্তিও আর ছিল না। মনে হচ্ছিল, এ যাত্রায় আর ফিরে যাব না।”

অবশেষে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ডাকাত দল টাঙ্গাইল শহর বাইপাস সড়কের শিবপুর এলাকায় বাসটি ফেলে রেখে অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন বাসের যাত্রীরা একে একে চোখের কাপড় খুলে নিজেদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে। বাসচালক দ্রুত বাসটি নিয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় যান এবং বিষয়টি পুলিশকে জানান।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমদ বলেন, “মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যেই আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি এবং ডাকাত চক্রকে চিহ্নিত করতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। আমাদের বিশেষ টিম এ নিয়ে কাজ করছে।”

এ ধরনের ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন উঠছে, রাতভর বাস চলাচল করা সত্ত্বেও কেন কোনো টহল পুলিশ এই বাসটি থামিয়ে তল্লাশি করেনি বা সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ করেনি?

বিশেষ নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মাহমুদ হাসান বলেন, “এটি কোনো সাধারণ ডাকাতি নয়। এটি ছিল সুপরিকল্পিত, সংগঠিত এবং দীর্ঘসময় ধরে পরিচালিত একটি অপারেশন। এটা স্পষ্ট, রাস্তায় পর্যাপ্ত নজরদারি ছিল না, নয়তো একাধিকবার একই রাস্তায় চলাফেরা করেও তারা ধরা পড়লো না কেন?”

যাত্রীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—এই রুটে রাতের বাস চলাচলের ওপর বিশেষ নজরদারি, পর্যাপ্ত টহল দল এবং হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা হোক।

没有找到评论