সাভারে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সাভারে বকেয়া বেতনের দাবিতে দুই পোশাক কারখানার শত শত শ্রমিক সড়কে নেমে আসে। হেমায়েতপুর ও আশুলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা। পুলিশ জলকামান দিয়ে সরানোর চেষ্টা করলে উত্তেজনা চরমে প..

সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিক আন্দোলনে থমকে যায় জনজীবন: বকেয়া বেতনের দাবিতে উত্তাল দুই শিল্পাঞ্চল

সাভারের শিল্পাঞ্চল আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বকেয়া বেতনের দাবিতে। সোমবার (২ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা দুটি পৃথক এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপেও থামেনি শ্রমিকদের ক্ষোভ।

সকালে প্রথমে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় বসুন্ধরা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা হেমায়েতপুর-সিগাইর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একই সময়ে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ছেইন এপারেলস নামের আরেকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাঠগড়া সড়কে অবস্থান নেন। দুই জায়গায়ই শত শত শ্রমিক স্লোগান দিতে থাকেন: “আমার টাকা চাই, বাঁচতে চাই”।

বকেয়া বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা

বসুন্ধরা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বলেন, “আমাদের বারবার ম্যানেজমেন্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ধাপে ধাপে বেতন দেবে। কিন্তু বাস্তবে কোনো টাকা দেয়নি। আমরা খালি কথা খেতে পারি না।” অনেকেই জানান, তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ ধার করে খাচ্ছেন, কেউ বাড়ি থেকে টাকা চেয়ে টিকেছেন রাজধানীতে।

ছেইন এপারেলসের একজন শ্রমিক বলেন, “গোটা রমজান কষ্ট করে কাটিয়েছি। ঈদের সময় সামান্য অগ্রিম দিয়েছিল। এখন পুরো বেতন চাইলেও দিচ্ছে না। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না।”

জলকামানে ছত্রভঙ্গ, কিন্তু দাবি অনড়

দুপুর ১২টার দিকে হেমায়েতপুরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে বসুন্ধরা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হঠাৎ তীব্র জলধারায় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেও ক্ষোভ থেকে যায় রাস্তায়। আশুলিয়ার কাঠগড়ায় আন্দোলনরত ছেইন এপারেলসের শ্রমিকরা দুপুর ১টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

প্রশাসনের অবস্থান ও তৎপরতা

এ বিষয়ে হেমায়েতপুর ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম সবুজ জানান, “আমরা শ্রমিকদের বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা রাস্তায় অবস্থান নেয়। পরে জলকামান ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”

আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, “শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তাদের যেন কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক আছি।”

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চান শ্রমিকরা

শ্রমিকদের দাবি, কেবল একবার বেতন দিলেই হবে না। কারখানাগুলোর ব্যবস্থাপনা যেন নিয়মিত বেতন দেয়—তা নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। না হলে প্রতিনিয়ত এ ধরনের আন্দোলনের আশঙ্কা থাকবে।

সাধারণ জনগণের ভোগান্তিও কম ছিল না। যান চলাচল বন্ধ থাকায় অফিসগামী ও স্কুলপড়ুয়া মানুষজনকে দীর্ঘ সময় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। বিক্ষোভরত শ্রমিকদের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি থাকলেও, অনেকে বলেছেন, এমন অবস্থায় যান চলাচল বন্ধ করে প্রতিবাদ না করলেই ভালো হতো।



এই আন্দোলন আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা কেবল উৎপাদনের অংশীদারই নন—তাদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত না হলে এর প্রভাব পড়ে অর্থনীতি থেকে রাজপথ পর্যন্ত। প্রশাসন ও মালিকপক্ষের উচিত দ্রুততম সময়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণ করে পরিবেশ স্বাভাবিক করা।

کوئی تبصرہ نہیں ملا