দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় রাজনৈতিক সহিংসতার পুরনো ক্ষত যেন আবার নতুন করে রক্তাক্ত হলো। সম্প্রতি বিরল থানায় সাবেক নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ১৫৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হলেন বিজোড়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক।
ঘটনাটি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজোড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বানিয়াপাড়া মোড়ে বিএনপির একটি অস্থায়ী নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়। অভিযোগে বলা হয়, হামলাটি ছিল পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা করা।
হামলাকারীরা লাঠি, রড ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্যাম্পে থাকা বিএনপি কর্মীদের উপর আক্রমণ চালায়, ভাঙচুর করে ক্যাম্পের চেয়ার-টেবিল, ব্যানার ও অন্যান্য প্রচারণা সামগ্রী। এমনকি হামলার সময় সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে একাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন, যাদের কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
এজাহারে কারা কারা?
এই মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নামও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ের একাধিক জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
বিরল থানার ওসি আনিছুর রহমান সরকার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বিস্ফোরক মামলা: রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব না কি প্রতিশোধ?
আইনজীবীদের মতে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা মানেই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। এই ধরণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই মামলার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা, সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
বিরোধীদল বিএনপি বলছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই হামলার বিচার দাবি করে আসছিল। কিন্তু সরকারপক্ষ বিষয়টি বরাবরই এড়িয়ে গেছে। এখন রাজনৈতিক চাপের বাইরে গিয়ে আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
অন্যদিকে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই মামলাকে "রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগ" বলে দাবি করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য, নির্বাচনের আগে পরিবেশ উত্তপ্ত করতে এবং প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কি বলছে বিশ্লেষকরা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরনো নির্বাচনকালীন সহিংসতার মামলা নতুন করে খোলা মানেই দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরও উত্তেজনা তৈরি হওয়া। বিশেষ করে যখন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে, তখন এমন মামলার প্রভাব স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তারা আরও মনে করছেন, বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষ থাকলে সত্যতা উদঘাটন হবে, এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার সম্ভব হবে। কিন্তু যদি মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তাহলে তা শুধু রাজনৈতিক বিভাজন আরও বাড়িয়ে দেবে।
শেষ কথা: সামনে কি অপেক্ষা করছে?
এই মামলার তদন্ত ও পরবর্তী কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যখন একজন সাবেক মন্ত্রীর নাম সরাসরি মামলার এজাহারে উঠে আসে, তখন সেটিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের বক্তব্য যাচাই করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত কী দিক নেয় এবং শেষ পর্যন্ত এই মামলার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।



















