ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংঘটিত এক সাইবার হামলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দেশটির গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। বুধবার (১৮ জুন) রাতের গভীরে হঠাৎই হ্যাকড হয়ে যায় ইরানের সরকারি চ্যানেল। দর্শকরা নিয়মিত অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে হঠাৎই দেখতে পান দেশজুড়ে অতীতে ঘটে যাওয়া বিক্ষোভের দৃশ্যাবলি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং (IRIB)’ কর্তৃপক্ষ। এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তারা জানান, স্যাটেলাইট সিগন্যাল হ্যাক করে সরাসরি সম্প্রচারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, হামলার উৎস ইসরায়েল এবং এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, হ্যাকাররা স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। কয়েক মিনিটের জন্য পুরো সম্প্রচার বন্ধ না হলেও, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই সময় প্রচারিত হয় বিক্ষোভরত জনতার স্লোগান, পুরোনো সরকারবিরোধী মিছিল এবং বিক্ষোভের নানা ভিডিও চিত্র।
টিভি কর্তৃপক্ষ আগেই তাদের দর্শকদের সতর্ক করে জানিয়েছিল—যদি সম্প্রচারে হঠাৎ বিভ্রাট, অপ্রাসঙ্গিক বার্তা বা অনভিপ্রেত ভিডিও দেখা যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে এটি কোনো শত্রু রাষ্ট্রের সাইবার আগ্রাসন।
এই হামলার জন্য সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি সাইবার হামলা নয়, বরং ইরানের গণমাধ্যম ব্যবস্থাকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করার প্রচেষ্টা। হ্যাকিংয়ের এই ঘটনায় তেহরানজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বিদ্যমান উত্তেজনার আবহে এটি একটি বড় ধরনের বার্তা, যা প্রথাগত যুদ্ধ নয়, বরং তথ্য যুদ্ধেরই এক ভয়ংকর রূপ।
এই হামলার আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবারেই সাইবার আক্রমণের শিকার হয় ইরানের অন্যতম প্রাচীন রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ‘সেপাহ’ এবং একটি বেসরকারি ব্যাংক ‘পাসারগাদ’। ব্যাংক দুটি একইভাবে ওয়েবসাইট ডাউন এবং সিস্টেমে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলে।
এই দুই ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, ইরানের অবকাঠামো, মিডিয়া এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে সমন্বিত সাইবার যুদ্ধ চালাচ্ছে একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী।
ঘটনার পরপরই ইরানের প্রশাসন জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডাকে এবং দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে সাইবার প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেয়। দেশটির প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি টিম’ ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, হামলার উৎস ট্রেস করার চেষ্টা চলছে এবং আগামী দিনগুলোতে এমন আক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।