জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রত্যয়: রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে বিশ্ব সংস্থা
উখিয়ায় মহাসচিবের আশ্বাস:
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কক্সবাজারের উখিয়ায় বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থীশিবির পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, "আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ লাঘবে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।"
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন সংকটের মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের মানবিক সহায়তার বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গুতেরেস বলেন, "আমি বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাচ্ছি, রোহিঙ্গাদের সহায়তা যেন কমে না যায়।"
খাদ্য সংকটের শঙ্কা: জাতিসংঘের তহবিল সংকটের প্রভাব
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) তথ্যমতে, অর্থায়নের অভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য রেশন ১২.৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই সংকট রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "যদি নতুন অর্থায়ন না আসে, তবে রোহিঙ্গাদের মৌলিক প্রয়োজনও মেটানো সম্ভব হবে না।" এ অবস্থায় জাতিসংঘ মহাসচিব আহ্বান জানিয়েছেন, "রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমানো একটি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা আমরা কোনোভাবেই চাই না।"
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারের প্রতি কঠোর বার্তা
শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের সময় জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, "রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর জন্য মিয়ানমারে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।"
শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা গুতেরেসের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রাখাইনে গণহত্যার বিচার দাবি করেন। তারা মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তিনি তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করেন।
জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন: বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা
জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, "বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচিকে আমরা সমর্থন করি এবং আশা করি এটি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে উদারতা দেখিয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হওয়া উচিত। মানবিক সহায়তা হ্রাস করা হবে একটি অপরাধ, যা আমরা মেনে নিতে পারি না।"
বাংলাদেশ সফরের তাৎপর্য: রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন আশার আলো?
অ্যান্তোনিও গুতেরেসের এই সফর এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। তবে জাতিসংঘের প্রধানের এই সফর নতুন করে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।
তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, "রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী। তাদের মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও বেশি ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।"
শেষ কথা:
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর কি রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে? নাকি এটি শুধুই আরেকটি প্রতিশ্রুতি হয়ে থাকবে? সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এক বিষয় নিশ্চিত, রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতিসংঘ তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।