উখিয়া, কক্সবাজার: রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিরাপদ প্রত্যাবাসন, নিরাপদ অঞ্চল এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা নেতাদের মতে, জাতিসংঘের তহবিল সংকটের কারণে খাদ্য সহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার ফলে শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এএ) ও সরকারি বাহিনীর চলমান সহিংসতার কথা উল্লেখ করে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, সেখানে এখনো রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস একসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন আশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রত্যাশা করছেন, দু’জনের প্রচেষ্টায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া গতি পাবে।
মেগা ইফতারে মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা
শুক্রবার (১৪ মার্চ) উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা। এতে রোহিঙ্গারা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
কক্সবাজার সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব ক্যাম্প ১৮-তে রোহিঙ্গা সংস্কৃতি স্মৃতি কেন্দ্র (আরসিএমসি) পরিদর্শন করেন এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা নেন। পরে ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টারে গিয়ে রোহিঙ্গা শিশুদের সাথে কথা বলেন।
রোহিঙ্গাদের আকুতি: দ্রুত প্রত্যাবাসন চাই
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জোবায়ের বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানাই, তবে দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ নয়। জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আমরা অনুরোধ করেছি, আমাদের দ্রুততম সময়ে স্ব-সম্মানে মিয়ানমারে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।”
বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্পে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ আট বছরে একটিও প্রত্যাবাসন হয়নি। বরং সাম্প্রতিক সহিংসতার ফলে রাখাইন রাজ্য থেকে আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।
পরিস্থিতি কতটা জটিল?
২০১৮ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রথমবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং তাদের দুর্দশার কথা শুনেন। এবার তার দ্বিতীয় সফর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আশাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। তবে বাস্তবতা হলো, মিয়ানমার সরকার এখনো নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দেয়নি, বরং রাখাইনে সহিংসতা বেড়েই চলেছে।
রোহিঙ্গা নেতাদের মতে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে দ্রুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা। অন্যথায়, ক্যাম্পের মানবিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে।
আপনার মতামত দিন: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে? মন্তব্য করুন!