close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

রক্তের সাগরে দেশ হয়েছে, এনসিপির পেছনে যাওয়া বিএনপির অপমান” — বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
একটি টেলিভিশন টকশোতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের অন্যতম ফজলুর রহমান বর্তমান রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতি এবং এনসিপির সঙ্গে বিএনপির সখ্যতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে বলেন—এটি শুধু রাজনৈতিক ভুল নয়, বর..

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ছাত্র রাজনীতি এবং বিএনপির সর্বশেষ কৌশল নিয়ে মুখ খুলেছেন অত্যন্ত খোলামেলা এবং বিস্ফোরক ভাষায়।

ফজলুর রহমান বলেন, “যাদের পিছনে এক সময় ৭ লাখ মানুষ রাজপথে নেমেছিল, তাদের আজ এই করুণ দশা যে, তিন দিন ধরে মাইকিং করেও ৭০০ জন মানুষ জড়ো করতে পারে না। সেই এনসিপির সঙ্গেই এখন বিএনপি যাচ্ছে। এই দলটির রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত নেই। আমি স্পষ্টভাবে বলছি—প্রথম মিটিং ইউনূস সাহেব করেছেন, আর এখন বিএনপি তাদের পাশে বসছে। বিএনপির জন্য এটা শুধু রাজনৈতিক ভুল না, জাতির জন্য অপমানজনক। আমার নেতা তারেক রহমানকে বলছি—এনসিপিকে আগে রেজিস্ট্রেশন করতে বলেন, তার পর বিবেচনা করুন। এটা কেবল বিএনপির মানহানি নয়, বরং দেশের জনগণের চেতনাতেও আঘাত।”

এই মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেন এক ঝড় বয়ে গেছে। ফজলুর রহমান এক পর্যায়ে বর্তমান ছাত্র রাজনীতি নিয়েও কঠোর সমালোচনায় মুখর হন।

তিনি বলেন, “আমরা ৫ আগস্টের আগে মনে করতাম এই ছাত্ররা যেন ফিডেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভেরার উত্তরসূরি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ, আর কলাগাছ ফুলে বটগাছ হয়ে গেছে। যাদের এক সময় থাকার ঘর ছিল না, আজ তারা প্লেন চড়ে বাড়ি যায়। দেশের মানুষ এগুলো দেখছে। ছাত্ররা এখন আর রাজনীতির জন্য মাঠে থাকে না, তারা ডিসি-ইউএনও অফিসে গিয়ে বসে থাকে—প্লট কিভাবে নেবে, কাকে বদলি করবে, সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।”

তিনি আফসোস করে বলেন, “এ জন্যই কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম? লাখো শহীদের রক্ত, নির্যাতিত মা-বোনদের ত্যাগ এই দেশের জন্য। আজ সেই তরুণ সমাজ ধ্বংসের পথে। তাদের আদর্শ নেই, নীতি নেই, কেবল নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। যারা এক সময় রাজপথে ছিল, তারা এখন অফিস আর কমিশনের লবিতে ঘোরে।”

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রসঙ্গেও বক্তব্য দিতে ভুল করেননি এই প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে একটি পরিকল্পিত চক্রান্তের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, মানবাধিকারকে গলা টিপে মারা হয়েছে। এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। দেশ রক্তের সাগর পার হয়ে এসেছে। আজো মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন, তাদের চোখের সামনেই দেশ ভেঙে পড়ছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা রাজাকার, আলবদর ও তাদেরই বংশধর। তারা চরম অপরাধী।”

তার এই বক্তব্যে বিএনপির ভিতরে ও বাইরে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে এনসিপির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ থেকে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

অনেকেই বলছেন, ফজলুর রহমানের এই বক্তব্য বিএনপির ভেতরে স্বচ্ছতা ও ভাবনার ঘাটতি স্পষ্ট করে। যেখানে আদর্শ ও ত্যাগের রাজনীতিকে সামনে আনার কথা ছিল, সেখানে এখন ক্ষমতা এবং সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর দখল স্পষ্ট। এনসিপির মতো এক অপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির পাশে বসে বিএনপি নিজের অবস্থানকেই দুর্বল করে ফেলছে।

এই বক্তব্যের পর দলীয় পর্যায়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি এখনও, তবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।



বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিএনপির কৌশলগত অবস্থান, ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয়, এবং গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে তার খোলামেলা সমালোচনায় উঠে এসেছে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর উদ্বেগ। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি নেতৃত্ব এই বাস্তব কথাগুলো কতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে।

Ingen kommentarer fundet