close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ৮৬ বার সময় নিল সিআইডি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির মামলায় ৮৬ বার সময় নিয়েও প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় সিআইডিকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিল আদালত।..

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ১০১ মিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে যায়। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তখন গোটা বিশ্বে সাইবার নিরাপত্তা ও ব্যাংকিং খাতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাইবার হ্যাকিং ও অর্থ চুরির মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কিন্তু বিস্ময়করভাবে আজ পর্যন্ত তারা ৮৬ বার সময় নিয়েও চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আজ বুধবার, ২ জুলাই, ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান একাধিকবার সময় নিয়েও নির্ধারিত সময়সীমা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত এ আদেশ প্রদান করেছেন।

সাধারণত এমন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় দীর্ঘসূত্রতা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু সিআইডি কেন এতবার সময় চেয়েছে, তার ব্যাখ্যা কখনও স্পষ্টভাবে জনসমক্ষে দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক খাত থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের মাঝেও এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। ৮৬ বার সময় নেওয়া মানে প্রায় ৮ বছর ধরে একটি আন্তর্জাতিক মানের চুরির মামলার তদন্ত ফাঁকা ঘুরপাক খাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি হওয়া ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে কমপক্ষে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের ম্যানিলা-ভিত্তিক আরসিবিসি (RCBC) ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে অর্থটি চলে যায় বিভিন্ন ক্যাসিনোতে। পরে ১৫ মার্চ ২০১৬, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মতিঝিল থানায় মামলা করেন।

এ পর্যন্ত আরসিবিসি থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংকে পাঠানো ২০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। বাকি অর্থের কোনও হদিস নেই।

চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ৬৬ মিলিয়ন ডলার ফেরতের লক্ষ্যে।

পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের ২ মার্চ, নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি চলমান রাখার অনুমতি দিলেও আরসিবিসির বিরুদ্ধে আনা কয়েকটি অভিযোগ খারিজ করে দেয়।

আর্থিক খাতের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় দীর্ঘ সময়েও তদন্ত সম্পন্ন না হওয়াকে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন অনেকে। অনলাইন, গণমাধ্যম ও অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন—যেখানে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির প্রশ্ন, সেখানে সিআইডির এমন ধীরগতির তদন্ত ব্যবস্থা জনগণের বিশ্বাসে আঘাত হানছে।

আদালতের পক্ষ থেকে এবার স্পষ্ট নির্দেশ এসেছে—২৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এটি হয়তো সিআইডির জন্য শেষ সুযোগ হতে পারে। কারণ এর পর আদালত আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

রিজার্ভ চুরির মতো জাতীয় অর্থনীতির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঘটনায় দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিআইডি এবার তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হলে শুধুই তদন্ত নয়, বরং গোটা ব্যবস্থা নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন উঠবে।

No comments found