চট্টগ্রামে একের পর এক হত্যা মামলার জালে জড়ানো শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাকে ঘিরে গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত নাটকীয় এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ প্রথমে তাঁকে গ্রেপ্তার করে, পরে জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দেয়, এরপর আবার ভিন্ন থানায় হেফাজতে নেওয়া হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামজুড়ে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা ও রহস্য। পুলিশ, আদালত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তামান্না।
প্রথম ধাক্কা: রাত ১০টায় গ্রেপ্তার
শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট বারৈয়পাড়ার একটি বাসা থেকে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানার পুলিশ। তিনি ছিলেন জোড়া খুনের মামলার অভিযুক্ত। পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের জামিন থাকলেও সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং তিনি নতুন করে আত্মসমর্পণ করেননি। ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানায় আনা হয়।
নাটকীয় মোড়: দুপুরে মুক্তি
রোববার দুপুরে ঘটে আরও একটি মোড় পরিবর্তন। তামান্নার আইনজীবী আদালতের কাগজপত্র জমা দিয়ে জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি ইতিমধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং ১৫ মে জামিন শুনানির দিন নির্ধারণ হয়েছে। তাঁর অন্তঃসত্ত্বা ও অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে আদালত নির্দেশ দেন, ওই সময় পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
বাকলিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, সব কাগজ যাচাই-বাছাই শেষে তামান্নাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এখানেই থেমে থাকেনি ঘটনা।
আবার হেফাজতে: এবার বায়েজিদ থানা
তামান্নার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় থাকা পূর্বের একটি আটকাদেশের কারণে তাঁকে আবার হেফাজতে নেওয়া হয়। বিকেল ৫টার দিকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তিনি বর্তমানে বায়েজিদ থানার হেফাজতে রয়েছেন।
পুরনো ভিডিওর রহস্য
তামান্নার নাম আলোচনায় আসে আরও আগেই—তাঁর স্বামী সাজ্জাদকে গত ১৫ মার্চ ঢাকায় গ্রেপ্তারের পর তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, “কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করব, জামিনে বের করব।” লাইভে তিনি আরও বলেন, “এখন তোমাদের পালা পলাতক থাকার।” এই ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়, পরে অবশ্য তিনি তা সরিয়ে ফেলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেই ভিডিওর সূত্র ধরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি আটকাদেশ দেওয়া হয়েছিল, যার ভিত্তিতে তাঁকে আবারও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সন্ত্রাস, হত্যা ও ভয়
শুধু বক্তব্যেই নয়, তামান্না ও সাজ্জাদ দম্পতির বিরুদ্ধে রয়েছে আরও ভয়াবহ অভিযোগ। গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় সাজ্জাদের সহযোগীরা একটি প্রাইভেটকার ধাওয়া দিয়ে গুলি করে হত্যা করে দুজনকে। নিহতদের একজনের মা বাদী হয়ে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ, তাঁর স্ত্রী তামান্নাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
এই জোড়া খুন মামলায় ৭ এপ্রিল গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
পুলিশের বক্তব্য
নগর পুলিশের বায়েজিদ জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন বলেন, “তামান্নার বিরুদ্ধে মূল খুনের মামলায় জামিন থাকায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তবে বায়েজিদ থানার আটকাদেশ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ঊর্ধ্বতনরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন।”
হাস্যোজ্জ্বল গ্রেপ্তার!
তামান্নাকে গ্রেপ্তারের সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়ায়, যেখানে দেখা যায়, তিনি হাসিমুখে থানায় প্রবেশ করছেন। বিষয়টি পুলিশি কার্যক্রমের মধ্যেই রহস্যঘন বার্তা বহন করে।
তামান্নার গ্রেপ্তার, মুক্তি এবং পুনরায় হেফাজতে নেওয়ার ঘটনা শুধু চট্টগ্রামে নয়, গোটা দেশে আলোচনার ঝড় তুলেছে। আইনি জটিলতা, আদালতের আদেশ, জামিন সংক্রান্ত বিতর্ক এবং আগের ভিডিওর প্রভাব—সব মিলিয়ে একটি রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বায়েজিদ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে থাকা আটকাদেশ কী সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।



















