রাজনীতির অঙ্গনে যেন প্রতিনিয়তই তৈরি হয় নতুন নাটকীয়তা। ঠিক তেমনি এক ব্যতিক্রমধর্মী নাম খাইরুল দেওয়ান, যিনি এবার নিজেকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন।
সম্প্রতি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয় একটি ছবি। সেখানে দেখা যায়, খাইরুল দেওয়ান নামের এক ব্যক্তি একটি ব্যানারের সামনে বসে আছেন। ব্যানারে স্পষ্ট লেখা—“প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী খাইরুল দেওয়ান, চেয়ারম্যান, জনকল্যাণ পার্টি।” ব্যানারটিতে তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন।
এর আগেও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন ২০২৩ সালে, যখন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দাবি করেন, নির্বাচন কমিশন তাঁকে মনোনয়ন ফরম দিচ্ছে না। সেই সময় তিনি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেন।
ভাইরাল বক্তব্যে নতুন রূপে হাজির
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেওয়া খাইরুল দেওয়ানের একটি বক্তব্য আবার ভাইরাল হয়। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন,
“এক দল যায়, আরেক দল আসে। কিন্তু প্রতিহিংসা যায় না। রাজনীতি মানেই সেবা, প্রতিহিংসা নয়। আমি খাইরুল, প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে একটি প্রতিহিংসামুক্ত দেশ গড়তে চাই।”
তাঁর ভাষ্যমতে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গা যেন হয় জনসেবায় প্রতিযোগিতা, দমন-পীড়নে নয়। তবে এই আশাবাদী বক্তব্যের মাঝে হঠাৎ করে তিনি কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়ে বসেন—
“আজকের পর থেকে যারা মানুষের গায়ে হাত দিবা, পুলিশের গায়ে হাত দিবা, তাদের হাত-পা ভেঙে দেব।”
এই বক্তব্য নিয়েই শুরু হয় নতুন করে আলোচনা। একদিকে তিনি শান্তির ডাক দিচ্ছেন, অন্যদিকে আবার প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন সহিংসতার! ফলে অনেকে তাঁকে “রাজনীতির প্যারাডক্স” বলে আখ্যায়িত করছেন।
‘আমরা আওয়ামী লীগ বুঝি না, বিএনপি বুঝি না’
খাইরুল দেওয়ান বলেন,
“আমরা জনগণ আওয়ামী লীগ বুঝি না, বিএনপি বুঝি না, জামায়াত বুঝি না, নাগরিক পার্টি বুঝি না। আমরা বুঝি জনগণ, যারা ভালো থাকতে চায়।”
তিনি দাবি করেন, জনকল্যাণ পার্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষের দল। তাদের লক্ষ্য একটাই—বিনাযুদ্ধের রাজনৈতিক পরিবর্তন। তবে তার বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে একটি বিষয়—‘আমরা গরিব, কিন্তু আত্মমর্যাদা আমাদের আছে।’
তিনি বলেন,
“কেউ অন্যায় করলে, ছোট হোক আর বড় হোক, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। কেউ কারো গায়ে হাত দিবে না, পুলিশ ডাক দেবেন, ধরিয়ে দেবেন।”
অতীতেও আলোচনায় ছিলেন খাইরুল
২০২৩ সালে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি সংবাদ শিরোনাম হন। সেসময় তিনি বলেছিলেন,
“আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ম্যানেজমেন্ট, এমনকি ডাক্তারির অ্যানাটমি-ফিজিওলজিও পড়েছি। আমাকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। রাষ্ট্রপতির লড়াইয়ে সুযোগ না দিলে আমরা আইনি পথে এগোবো।”
তাঁর দাবি অনুযায়ী, তিনি বহু বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, অভিজ্ঞতাও নাকি বিশাল। তিনি নিজেকে একাধারে শিক্ষিত, সাহসী এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে তুলে ধরেছেন।
রাজনীতিতে রঙিন চরিত্রের জায়গা কতটুকু?
খাইরুল দেওয়ানের মতো ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্বের হঠাৎ আগমন আমাদের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি নিছক একরকম পাবলিসিটি স্টান্ট। আবার কেউ বলছেন, গণতন্ত্রে সকলের অধিকার আছে নেতা হওয়ার, খাইরুল সেটিই ব্যবহার করছেন।
তবে এ কথাও সত্য, তাঁর বক্তব্যের মধ্যে অনেক দ্বৈততা লক্ষ্য করা যায়—একদিকে শান্তির বার্তা, অন্যদিকে হুমকি।
শেষ কথা
খাইরুল দেওয়ান এখনো মূলধারার কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি এবং বক্তব্য এখনো বিতর্ক তৈরি করছে। তিনি সত্যিই কি ভবিষ্যতের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারবেন? নাকি থেকে যাবেন শুধুই একটি “ভাইরাল মুখ”?
সময়ই সেই উত্তর দেবে।