close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

রাষ্ট্র গঠনের এমন সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না, আলী রীয়াজ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাষ্ট্র সংস্কারে বড় সুযোগ এসেছে বলে মন্তব্য করলেন ড. আলী রীয়াজ। ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ সময় হেলায় হারালে তা হবে জাতির জন্য চরম ক্ষতির কারণ।..

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে দেশ। জাতীয় ঐকমত্য, রাষ্ট্র গঠন ও সংস্কারের একটি সোনালি সুযোগ এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও প্রখ্যাত রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, “৫৩ বছরে এমন সুযোগ আর আসেনি। বহু অন্যায়, নিপীড়ন ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা আজ এই জায়গায় এসেছি। এই সুযোগ যদি আমরা হেলায় হারাই, তাহলে তা হবে ইতিহাসের এক চরম ব্যর্থতা।”

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ‘জুলাই সনদ’ তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার নবম দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এদিনের আলোচনা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গঠনমূলক।

সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা ভুলে গেলে চলবে না—এই রাষ্ট্র গঠনে হাজারো মানুষের রক্ত, চোখের জল ও স্বপ্ন জড়িত। এক একটি আত্মত্যাগ আমাদের চলার পথের দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের এ প্রচেষ্টায় যদি আমরা আবারও দলাদলি, বিভাজন ও রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করি, তবে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। এ সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।”

কমিশনের আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি এমদাদুল হক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আইয়ুব মিয়া, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ৩০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন। যেসব রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ নেয় তার মধ্যে রয়েছে—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দল।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য, জুলাই মাসের মধ্যেই একটি ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করা, যা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা দেবে। এই সনদে জনগণের মৌলিক অধিকার, স্বাধীন নির্বাচন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং সংবিধানের পুনর্বিন্যাস নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, “এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য একটি গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা, যেখানে জনগণের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে। সকল মতপার্থক্য দূরে রেখে জাতীয় ঐক্যের পথে হাঁটলেই আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই ঐকমত্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হয়, তবে তা হতে পারে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং রাষ্ট্র সংস্কারের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তবে এজন্য প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তরিকতা এবং জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ।

রাষ্ট্র গঠনের এমন বিরল সুযোগ বারবার আসে না। এই মুহূর্তে যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনগণ একযোগে এগিয়ে না আসে, তাহলে সামনে অপেক্ষা করছে অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলা। ড. আলী রীয়াজের কণ্ঠে তাই ছিল দৃঢ় বার্তা—“এটা শুধু সুযোগ নয়, এটা আমাদের ভবিষ্যতের পরীক্ষা।”

No comments found


News Card Generator