ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের মধ্যে ঘটে গেল এক নজিরবিহীন হামলা। ইউক্রেন একযোগে রাশিয়ার অভ্যন্তরে চারটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। কিয়েভ বলছে, এ হামলায় ধ্বংস হয়েছে রাশিয়ার অন্তত ৪০টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে রয়েছে তাদের কৌশলগত বোমারু বিমান টিইউ-৯৫, টিইউ-২২এম৩ এবং নজরদারি প্লেন এ-৫০।
হামলা ‘রাশিয়ার হৃদয়ে’ — হাজার কিলোমিটার দূরের ঘাঁটিতে আঘাত
হামলাগুলো শুধু সীমান্তবর্তী এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং এসবিইউ পরিচালিত এই অভিযান রাশিয়ার বহু অভ্যন্তরে ইরকুটস্ক, ওলেনিয়া এবং বেলায়ার মতো সামরিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। ইউক্রেনীয় সূত্র অনুযায়ী, এই হামলা ছিল বহু মাস ধরে প্রস্তুতি নেওয়া এক বড় কৌশলগত অপারেশনের অংশ, যার কোডনেম ছিল ‘পাভুতিনা’, অর্থাৎ জাল বা ফাঁদ।
রাশিয়ার ইরকুটস্ক অঞ্চলের গভর্নর ড্রোন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সেনাবাহিনী থেকে এই হামলার ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো দেওয়া হয়নি।
এসবিইউ-এর দাবি: ‘রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো জ্বলছে’
ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা (এসবিইউ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “রাশিয়ার অভ্যন্তরে শত্রুপক্ষের কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো জ্বলছে। এই হামলা ছিল সফল এবং লক্ষ্যনির্ভর।”
তারা আরও জানায়, রাশিয়ার দূরপাল্লার বিমান শক্তিকে অকার্যকর করে দেওয়াই ছিল এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। সূত্র বলছে, এসবিইউ এমন একটি সময় এই অভিযান চালায়, যখন রাশিয়া তাদের দূরপাল্লার টিইউ-৯৫ ও টিইউ-২২এম৩ বিমানের মাধ্যমে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে মিসাইল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
রয়টার্স ও কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টের তথ্য মিলিয়ে বিস্ফোরক চিত্র
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায়, হামলার লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার চারটি প্রধান বিমান ঘাঁটি, যেখানে রুশ বিমানবাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক ইউনিটগুলো মোতায়েন থাকে।
অন্যদিকে, কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টের রিপোর্টে বলা হয়, এই অভিযানে কমপক্ষে ৪০টি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রাশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি বিমান A-50, যেটি যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ও মিসাইল শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হতো।
কৌশলগত পাল্টা আঘাত নাকি যুদ্ধের নতুন রূপ?
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ইউক্রেনের যুদ্ধনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করল। এতদিন ইউক্রেন সীমান্তবর্তী এলাকা এবং অধিকৃত অঞ্চলেই আক্রমণ করত, কিন্তু এবার তাদের টার্গেট সরাসরি রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের গভীরে গিয়ে কৌশলগত ঘাঁটিতে।
এটি শুধু রাশিয়ার বিমান সামর্থ্যকেই দুর্বল করবে না, বরং তাদের প্রতিরক্ষা কাঠামোর দুর্বলতাও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে।
রাশিয়ার নীরবতা: কৌশলগত চাপ, না আত্মরক্ষার পথ?
রাশিয়া এই হামলা নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দেয়নি। এটি অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও, কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, এটা রাশিয়ার কৌশলগত নীরবতা — যার মাধ্যমে তারা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা গোপন রাখতে চায়।
যুদ্ধ নতুন স্তরে
ইউক্রেনের এই অভিযানে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, যুদ্ধ এখন আর শুধুমাত্র সম্মুখ সমরে সীমাবদ্ধ নেই। এটি ঢুকে পড়েছে গভীর পরিকল্পনার যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে প্রযুক্তি, দূরপাল্লার স্ট্রাইক এবং গোপন অভিযান — তিনটিই প্রধান অস্ত্র।
এই হামলা রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধকে আরও ভয়াবহ ও বিস্তৃত করে তুলবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।