close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

রাঙামাটিতে ভাঙা হচ্ছে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রাঙামাটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে সংগঠিত একদল বিক্ষুব্ধ জনতা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে সরাসরি ভাস্কর্য ভাঙার ..

রাঙামাটিতে দীর্ঘ আলোচিত ও বিতর্কিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটি অবশেষে সরাসরি জনরোষের মুখে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১৬ মে) বিকেল ৩টা থেকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হয় এ ঘটনা।

মিছিলটি ভেদভেদী বাজার থেকে শুরু হয়ে রাঙামাটি জেলা শহরের সার্ভার স্টেশন এলাকায় স্থাপিত ভাস্কর্যের সামনে এসে অবস্থান নেয়। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে লোহার হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যের ওপর আঘাত হানতে শুরু করে। পরে যুক্ত হয় ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিন, যার সাহায্যে দ্রুত ভাঙচুরের কাজ এগিয়ে যায়।

ঘটনার নেতৃত্বে থাকা ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা, রাঙামাটির’ অন্যতম সংগঠক মো. ওয়াহিদুজ্জামান রোমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা গত বুধবার ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। যেহেতু স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, তাই আমরা নিজেরাই এই ভাস্কর্য অপসারণের কাজ শুরু করেছি। আমরা আশা করছি আজ রাতেই সম্পূর্ণ ভাঙা শেষ হয়ে যাবে।”

পুরো ঘটনার পটভূমি:

এই ভাস্কর্য নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১২ সালে, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ সালের ক্ষমতায় আসার পরপরই। নির্মাণ কাজটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। প্রায় আট বছর ধরে ধাপে ধাপে নির্মাণ হলেও ভাস্কর্যটির কিছু কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে।

প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভাস্কর্য ঘিরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পে নকশাগত ত্রুটি ছিল এবং অর্থ বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার হয়নি। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল—এই প্রকল্পের ঠিকাদার ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর স্বামী আনোয়ার হোসেন।

এমন একজন রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ভাস্কর্য নির্মাণ এবং তাতে অনিয়মের অভিযোগ রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় পুরো প্রকল্পটিকে।

প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা:

ভাস্কর্য ভাঙচুরের খবর জানার পর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, “ভাঙচুরের খবর পেয়েছি, কিন্তু কারা করছে তা জানা নেই।”

অন্যদিকে, রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহেদ উদ্দিন জানান, তিনি বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন এবং এই বিষয়ে কিছু জানেন না।

প্রশাসনের এই ধরণের বক্তব্যে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ। প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসন কী ইচ্ছাকৃতভাবে নিরব থেকেছে, নাকি বাস্তবেই তারা ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছে?

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ:

এই ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনাকে অনেকে রাজনৈতিক প্রতিবাদের রূপ হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি শুধুই অনিয়ম ও অপচয়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। বিশ্লেষকদের মতে, ভাস্কর্য নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ, অসম্পূর্ণতা, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা’র প্রতিবাদ এই ঘটনাকে একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেছে।

বিশেষ করে এই ধরনের কর্মসূচি যেখানে জাতির পিতার ভাস্কর্য সরাসরি টার্গেট হয়, তা দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।


 

রাঙামাটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা নিঃসন্দেহে একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। এটি শুধু একটি ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা নয়, বরং সরকারের প্রতি অনাস্থা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং দীর্ঘদিনের অনিয়মের বিরুদ্ধে জনগণের একপ্রকার তীব্র প্রতিবাদ।

कोई टिप्पणी नहीं मिली