close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আইএমএফ বলেছে, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ও ভর্তুকি কমাতে হবে বাংলাদেশকে। বাজারনির্ভর বিনিময় হার ও শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।..

রাজস্ব আদায়ে দুর্বলতা, ভর্তুকিতে অতি নির্ভরতা এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা না থাকায় বাংলাদেশকে একাধিক কঠিন সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে এবং ধীরে ধীরে ভর্তুকি কমাতে হবে। একইসঙ্গে আইএমএফ আরও বলেছে, বাংলাদেশকে বাজারনির্ভর বিনিময় হার চালু করতে হবে এবং ভবিষ্যতে একে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

রোববার (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন সংস্থাটির মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। উপস্থিত ছিলেন উপমিশনপ্রধান আইভো ক্রিজনার এবং ঢাকায় আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে।

আইএমএফের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজস্ব সংগ্রহের হার মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) তুলনায় বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ অবস্থান থেকে উত্তরণ প্রয়োজন। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি।

পাপাজর্জিও বলেন, “বাংলাদেশকে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। এটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য হলেও সম্ভব। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে কার্যকর নীতিমালা ও বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা দরকার।”

একইসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং কৃষিখাতে দেওয়া অতিরিক্ত ভর্তুকি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। ভর্তুকির অকার্যকর ব্যবস্থাগুলোর পরিবর্তে টার্গেটেড সহায়তা চালু করা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা সামাজিক নিরাপত্তাবলয় জোরদার করতে হবে।

আইএমএফ জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। শুধু গার্মেন্টসের ওপর নির্ভরশীলতা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এজন্য হাইটেক, কৃষিভিত্তিক এবং সার্ভিস খাতে রপ্তানি বাড়াতে হবে।

তাদের মতে, বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) বাড়াতে হলে আইনি কাঠামো উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন, ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং তথ্যপ্রবাহের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ ২০২৬ থেকে বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। বাড়তি সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ আরও ৮০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাবে।

আইএমএফের কর্মকর্তারা বলেন, “২০২৪ সালের রাজনৈতিক উত্তেজনার পরও বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামো ধরে রাখতে পেরেছে। কিছুটা ধীরগতি থাকলেও বাংলাদেশ ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে মোটামুটি সঠিক পথেই রয়েছে।”

রাজস্ব সংগ্রহে স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক একসঙ্গে কাজ শুরু করেছে। এনবিআরের প্রশাসনিক কাঠামো ও কার্যকরী সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে পাপাজর্জিও বলেন, “বাংলাদেশকে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর জন্য একটা সমন্বিত রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এতে শুধু ট্যাক্স বাড়ালেই হবে না, বরং কর পরিহার, দুর্নীতি ও তথ্য গোপনের প্রবণতাও বন্ধ করতে হবে।”

আইএমএফের এই সুপারিশগুলো শুধু আর্থিক খাতে নয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। সামনে এলডিসি থেকে উত্তরণ, নির্বাচনোত্তর চ্যালেঞ্জ এবং বৈদেশিক মুদ্রার চাপ—এসব মাথায় রেখে সরকারকে এখন অর্থনৈতিক সংস্কারের বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে বৈশ্বিক সহযোগিতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Ingen kommentarer fundet