রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার ঢল, নেই আওয়ামী লীগ-জামায়াতের প্রতিনিধি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা, অনুপস্থিত ক্ষমতাসীনদের ছায়া রাজধানীর ঐতিহাসিক রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জা
রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা, অনুপস্থিত ক্ষমতাসীনদের ছায়া রাজধানীর ঐতিহাসিক রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে সেখানে দেখা মেলেনি ক্ষমতা হারানো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কিংবা বিরোধী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর কোনো প্রতিনিধির। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই রায়েরবাজার বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা শ্রদ্ধা জানাতে আসতে শুরু করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে হাজারও মানুষের অংশগ্রহণে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে। তবে তুলনামূলকভাবে এবার মানুষের সংখ্যা ছিল কিছুটা কম। "বধ্যভূমিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অনুপস্থিতি" স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও এবার সেই চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি আওয়ামী লীগ ঘরনার একজন মুক্তিযোদ্ধা বধ্যভূমি এলাকায় উপস্থিত হলে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে তিনি স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, "শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের জাতির সূর্য সন্তান। তাদের আত্মত্যাগে একটি স্বাধীন জাতির গঠন সম্ভব হয়েছে। এসব দিবস আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে।" তিনি আরও বলেন, "শহীদদের স্মরণে আমাদের উচিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা।" ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফ সোহেল রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, "৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪-এর গণআন্দোলন একে অপরের ধারাবাহিকতা। কিন্তু একটি মহল মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় ব্যানারে সীমাবদ্ধ করতে চায়। এটি ছিল পুরো জাতির লড়াই—শুধু আওয়ামী লীগের নয়।" তিনি অভিযোগ করে বলেন, "আওয়ামী লীগ সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা—সাম্য, মানবিকতা ও সুবিচার—অনুপ্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।" "নতুন প্রজন্মের দায়বদ্ধতা" রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা তরুণ সমাজের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তাৎপর্য নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষণীয়। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বক্তারা বলেন, "শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাদের ত্যাগের প্রকৃত স্বীকৃতি দিতে হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।" "মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিভক্তি, সমাধান কোথায়?" শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রায়েরবাজার বধ্যভূমির এই চিত্র প্রমাণ করে রাজনৈতিক বিভাজন আজও প্রকট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা জাতির ঐক্যকে বিনষ্ট করছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্থান হিসেবে রায়েরবাজার বধ্যভূমি আজও একটি দুঃসহ স্মৃতি বহন করে চলেছে। তবে এই দিবসকে ঘিরে সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন অনেকে। রায়েরবাজার বধ্যভূমি আজও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে রাজনৈতিক বিভেদ ও অনুপস্থিতি প্রশ্ন তুলছে—জাতির সূর্য সন্তানদের স্মরণ কি শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব আমরা সত্যিই নিতে পারব?
Nenhum comentário encontrado


News Card Generator