ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো এখন বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। আর এই অবস্থার জন্য ইরান নিজেই কতটা দায়ী, সে প্রশ্ন তুলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সম্প্রতি রুশ বার্তা সংস্থা তাস আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছু মাস আগে রাশিয়া ইরানকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যৌথ প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ইরান সেই সময় রাশিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, যা এখন তাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা একসময় আমাদের ইরানি বন্ধুদের সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তখন আমাদের অংশীদাররা বিশেষ কোনো আগ্রহ দেখাননি।”
এই প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইরান-রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তির আলোচনার সময়। যদিও ওই চুক্তিতে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কোনো ধারা ছিল না, পুতিন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, "আকাশ প্রতিরক্ষা নিয়ে আলোচনার মতোও কিছু ছিল না।
এদিকে ২০ বছরের মেয়াদী এই কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে সই করে ১৭ জানুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। অথচ এত দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্বের পরও প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা নিয়ে ইরানের অনাগ্রহ রাশিয়ার কাছে বিস্ময় হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ইরানের এই অনাগ্রহের ফলাফল দ্রুতই সামনে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ বিমান অভিযানে ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পরমাণু কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ফর্দো এবং ইস্পাহান— সরাসরি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২১ জুন) মধ্যরাতে, উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন এই তিন কেন্দ্রের ওপর তীব্র বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যার নেপথ্যে ছিল ইসরায়েলের সহায়তা।
এই হামলা শুধু ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি বড় ধরনের কৌশলগত ধাক্কা। রাশিয়াও এই হামলার কড়া সমালোচনা করে বলেছে, এটা শুধু আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“যেকোনো যুক্তি দেখানো হোক না কেন, একটি সার্বভৌম দেশের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার চরম লঙ্ঘন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইরানের সরকারও।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই হামলা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (NPT) সরাসরি লঙ্ঘন। তিনি বলেন,
ইরান নিজেদের সুরক্ষার জন্য যেকোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার রাখে। এর গুরুতর পরিণতি যুক্তরাষ্ট্রকে ভোগ করতে হবে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক পৃথক বিবৃতিতে সরাসরি অভিযোগ করেছে,
“জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়েও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সব নিয়ম ভেঙেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান যদি আগেভাগেই রাশিয়ার সঙ্গে আকাশ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশ নিত, তাহলে আজ এতটা বিপদের মুখোমুখি হতে হতো না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই সমন্বিত হামলা রুখে দেওয়ার সক্ষমতা ইরান তখন পেত।
আন্তর্জাতিক মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে—
ইরান কি এবার রাশিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে নতুন করে ভাববে?
মধ্যপ্রাচ্যে কি আবারও বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে?
নজর এখন ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন সামরিক জোট গঠনের দিকে।