রাজনীতির উত্তপ্ত মঞ্চে নতুন করে আলোচনায় এসেছে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যার বিচার। রাজধানীর গেন্ডারিয়া-ওয়ারী জোনে জামায়াতে ইসলামীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এমনই মন্তব্য করেন দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
তিনি বলেন, “এই রাষ্ট্র শুধু একটি দলের নয়। জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথ খুলে দিতে হলে প্রথমে প্রয়োজন রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এবং অতীতের গণহত্যার দায় নিরপেক্ষভাবে নির্ধারণ। তারপরে হতে পারে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।”
ড. মাসুদের মতে, একদলীয় আনুগত্য দেশকে ফ্যাসিবাদে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “গণতন্ত্রের নামে যদি আমরা একক গোষ্ঠীর হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার রিমোট তুলে দিই, তবে ভয়াবহ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তিনি অতীত আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বর্তমান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সেই সরকারের কাজ ছিল তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে ভিত্তি করে কাজ শুরু করা—রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন।”
এই প্রেক্ষাপটে জামায়াত নেতা গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। জাতির প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। আমরা মনে করি, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে জাতিকে এই দুঃসময় থেকে মুক্ত করতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে জনগণের প্রকৃত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। ভয়ভীতি, গুম-খুনের রাজনীতি নয়—নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে প্রতিটি পদক্ষেপে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. মাসুদ বলেন, “ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের এই চূড়ান্ত সময়। অতীতের তুলনায় আজ আরও বেশি আত্মত্যাগ, কোরবানি ও নিষ্ঠার প্রয়োজন। আল্লাহর বিধান অনুসরণ করলেই এ জাতি মুক্তির পথ খুঁজে পাবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামাল হোসেন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ড. আব্দুল মান্নান, মাওলানা মীর আমিরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, গোলাম আজম, কামরুল ইসলামসহ মহানগরীর নেতারা।
এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি নিছক শুভেচ্ছা বিনিময়ের জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং এর মাধ্যমে উঠে এসেছে দেশের চলমান সংকট এবং রাজনৈতিক উত্তরণের দিকনির্দেশনা। ড. মাসুদের কণ্ঠে স্পষ্ট যে, জামায়াত এখন আর কেবল দাবিদাওয়া করছে না, বরং একটি কাঠামোগত সমাধানের রূপরেখাও হাজির করছে।