পুলিশকে ব্রিজে ঝোলানোর হুমকি, অভিযোগ উঠল ভিপি নুরের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
‘গণঅধিকার পরিষদের কোনো নেতাকর্মীর গায়ে হাত তুললে পুলিশকে মেরে ব্রিজে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে’—এই বক্তব্যের কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন সংগঠনটির সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। তার এই বক্তব্যকে ‘হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
২০২৫ সালের ২৪ মে শনিবার, বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান পিপিএম ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. নাজমুল করিম খান যৌথভাবে এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক
পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গণজমায়েতে ভিপি নুর বলেন, “এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পুলিশ আমাদের গায়ে হাত দিলে, সেই হাত আর আস্ত থাকবে না। আমি স্পষ্ট করে বলছি—যাত্রাবাড়ীতে যেমনভাবে জনতা পুলিশকে মেরে ব্রিজে ঝুলিয়ে রেখেছিল, তেমনভাবেই যদি আমাদের নেতাকর্মীদের গায়ে হাত পড়ে, তার পরিণাম একই হবে।”
এই বক্তব্য প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনটি জানায়, এটি শুধু একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সরাসরি হুমকি। তারা বলেন, পুলিশ বাহিনী দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কাজ করে। এই ধরনের বক্তব্য শুধু জনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করে না, বরং এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।
পুলিশের তীব্র প্রতিক্রিয়া
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ পুলিশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাহিনী সবসময় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকাকে হুমকির মুখে ফেলার যেকোনো প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য।”
তারা আরও দাবি করেন, ভিপি নুরের এই মন্তব্য পরিকল্পিতভাবে পুলিশের মনোবল ভাঙার চেষ্টা। উল্লেখ করা হয়, “৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে নিরলসভাবে কাজ করেছে, তা দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। এখন সেই আস্থাকে নষ্ট করতে ও পুলিশের মানসিক শক্তি ভেঙে দিতে কোনো বিশেষ মহল এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।”
রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত?
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এমন বক্তব্যের মাধ্যমে একটি ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলেন, "পুলিশকে দুর্বল করে দিলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশ করা যেতে পারে, কিন্তু তা শালীনতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি সম্মান বজায় রেখে হওয়া উচিত।”
অপরাধমূলক উস্কানি ও শান্তি বিনষ্টের অভিযোগ
অ্যাসোসিয়েশন আরও বলেছে, “এই ধরনের বক্তব্য শুধু উস্কানিমূলক নয়, বরং তা জনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারী এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের শামিল। আমরা এই অপরাধমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এমন বক্তব্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ।”
তারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে দায়িত্বশীল বক্তব্য প্রদান করা হয় এবং গঠনমূলক সমালোচনাই যেন হয়ে ওঠে গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি।
ভিপি নুরের বক্তব্য ও পুলিশের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে ধরনের স্পর্শকাতর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেখানে এই ধরনের বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—রাজনৈতিক নেতাদের বাকস্বাধীনতা কতটা দায়িত্বশীল হওয়া উচিত? আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি দিলে সেটির প্রতিক্রিয়া কোথায় গিয়ে ঠেকবে?