close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

পুলিশের থেকে হ্যান্ডকাপসহ আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিল জনতা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পুলিশের হাত থেকে হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজুকে জনতার এক বিশাল দল সরাসরি ছিনিয়ে নেয়। হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে..

বিস্ময়কর নাটকীয়তা: পুলিশের সামনে হ্যান্ডকাপসহ আসামি উদ্ধার করলো জনতা

লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলায় ঘটে গেছে এক অভাবনীয় ঘটনা। প্রকাশ্যে পুলিশের উপস্থিতিতেই হ্যান্ডকাপ পরানো অবস্থায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। শনিবার (২৪ মে) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ বিস্ময়কর ঘটনার সূত্রপাত।

ঘটনার মূল চরিত্র আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজু—চরকাদিরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে মামলাসহ নানা অভিযোগ চলছিল। শনিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করতে যায় কমলনগর থানার একটি পুলিশ দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন এএসআই প্রদীপ চন্দ্র দাস এবং পুলিশ সদস্য আরজু।

পুলিশ রাজুকে গ্রেপ্তার করে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে থানায় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘটনার মোড় নেয় এক রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তায়।

হাজারো মানুষের প্রতিরোধ: উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা

রাজুর গ্রেপ্তারের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকা যেন জনসমুদ্রের রূপ নেয়। প্রায় ৫ হাজারের মতো নারী-পুরুষ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন, পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং রাজুর মুক্তির দাবি তোলেন। পুলিশের বারংবার অনুরোধ উপেক্ষা করে জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে জনতার একটি অংশ রাজুকে পুলিশি হেফাজত থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। পুলিশের চোখের সামনে থেকেই তাকে নিয়ে যায় তারা। তখনও রাজুর হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো ছিল।

পুলিশের ব্যর্থতা?

এ ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে ছুটে আসেন কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের আরও সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছু সময় পর রাজুকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং হ্যান্ডকাপটি পুলিশের কাছে ফেরত আসে।

ওসি তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজু একজন মামলার আসামি। আমাদের টিম তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল, কিন্তু জনতার বাধার মুখে আমরা সফল হতে পারিনি। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে হ্যান্ডকাপ উদ্ধার করি।”

প্রশ্ন উঠছে: জনতার কাছে পরাজিত আইন?

এই ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—একজন মামলার আসামিকে প্রকাশ্যে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হলে তা কীভাবে আইনের শাসনকে প্রতিনিধিত্ব করে?

স্থানীয়দের একাংশ বলছে, রাজু ছিলেন জনপ্রিয় নেতা, তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, কোনো অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বৈধ নয়।

নজিরবিহীন ঘটনাটি তদন্তের দাবি রাখে

পুলিশি ব্যর্থতা, জনতার উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক প্রভাব—এই তিনটি উপাদান মিলে লক্ষ্মীপুরের এই ঘটনা যেন বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার গভীর সংকটকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে পুলিশের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার ভবিষ্যত ফলাফল কী দাঁড়ায়, তা সময়ই বলবে।

Nema komentara