close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

পুলিশের গাড়ি দেখে পালাতে গিয়ে যুবলীগ নেতার মৃত্যু

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
হবিগঞ্জের লাখাইয়ে পুলিশের গাড়ি দেখে আতঙ্কে দৌড় দেন যুবলীগ নেতা ফজল উদ্দিন ইমন। পথেই বুকে ব্যথা অনুভব করে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যু—থানার দাবি, ইমনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না, পুলিশ ধ..

আতঙ্কেই মৃত্যু? পুলিশের গাড়ি দেখে পালাতে গিয়ে যুবলীগ নেতার করুণ পরিণতি!

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। পুলিশের গাড়ি দেখেই আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ হারালেন যুবলীগের এক সক্রিয় নেতা। তেঘরিয়া গ্রামের ফজল উদ্দিন ইমন (৪৫), যিনি লাখাই উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তিনি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে বুকে ব্যথা অনুভব করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তার।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২০ মে) রাত আনুমানিক ৩টার দিকে। লাখাই থানা পুলিশ একটি নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। এই অভিযানের সময় পুলিশের গাড়ি প্রবেশ করে তেঘরিয়া গ্রামে। পুলিশি উপস্থিতি টের পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ফজল উদ্দিন ইমন। তিনি আচমকাই দৌড় শুরু করেন এবং কিছুদূর যাওয়ার পরেই হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ইমন হঠাৎ করে দৌড়াতে শুরু করেন, তাদের অনেকেই ভেবেছিলেন পুলিশ হয়তো তাকে ধরতে এসেছে। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যেই তাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখনই স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজী শামসুল আরেফিন জানান, “স্বজনরা জানিয়েছেন, দৌড়াতে গিয়ে ইমন বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে আনা হলেও আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা কেবল তাকে মৃত ঘোষণা করেছি।”

এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশি তৎপরতার সম্পর্ক থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। অনেকেই ধারণা করছেন, পুলিশের গাড়ি দেখে মনে ভয়ে ইমন পালাতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বন্দে আলী এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ইমনের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা ছিল না। আমরা তাকে ধরার কোনো অভিযানও চালাইনি। সে হয়তো নিজের মনের ভয়ে দৌড় দিয়েছিল। পুলিশ তাকে ধাওয়া করেনি।”

পুলিশের এমন বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এলাকায়। কারণ একজন রাজনৈতিক নেতার এই ধরনের আচরণ স্থানীয়দের চোখে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, ইমন একজন দায়িত্ববান নেতা ছিলেন এবং এলাকায় ভালো পরিচিতি ছিল তার। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকলেও তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ ওঠেনি।

এদিকে তার আকস্মিক মৃত্যুতে তেঘরিয়া গ্রামসহ গোটা লাখাই উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা এই ঘটনায় মর্মাহত। কেউ কেউ বলছেন, পুলিশের গাড়ি দেখেই আতঙ্কে প্রাণ হারানো কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। একে কেন্দ্র করে তদন্তের দাবি উঠছে নানা মহলে।

পরিবারের সদস্যরা এখনো শোকস্তব্ধ। ইমনের স্ত্রী বলেন, “ও খুব সাধারণ জীবন যাপন করতো। কেন যে এমন হলো বুঝতে পারছি না। আমাদের ঘর থেকে ও কখনো পালানোর মতো কিছু করেনি।”

ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার জন্য অনেকেই স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ফজল উদ্দিন ইমনের মৃত্যু শুধুই এক ব্যক্তির মৃত্যু নয়—এ যেন রাষ্ট্র ও প্রশাসনের প্রতি জনসাধারণের আস্থার প্রশ্ন।



এই করুণ ঘটনার পেছনে যেটাই হোক না কেন—একটি প্রাণ চলে গেছে। আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা এবং দায়িত্বহীন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে যেন এমন আর কোনো পরিবারের কান্নার কারণ না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকা জরুরি।

No comments found


News Card Generator