close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
১৯২০-এর দশকে ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা বর্তমানে চাকরি, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথির জন্য আবেদনকারীদের যাচাইয়ের প্রক্রিয়া হিসেবে বহাল রয়েছে। তবে এই পদ্ধতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধ, হয়রানি এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এটি বাতিলের সুপারিশ সামনে এসেছে।
ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্য থেকে আজকের চ্যালেঞ্জ
ব্রিটিশ শাসনামলে এই প্রথা চালু হয়েছিল চাকরিপ্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় এবং চারিত্রিক তথ্য যাচাই করতে। এর মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমন। আজকের বাংলাদেশে, একই প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হলেও তা অনেক সময় বৈষম্য, দুর্নীতি এবং হয়রানির মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই বন্ধ এবং হয়রানিমূলক প্রক্রিয়া নির্মূল করা প্রয়োজন। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বন্ধের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, “প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি বিচার করা অযৌক্তিক এবং এটি প্রার্থীদের হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
পদ্ধতির বর্তমান বাস্তবতা
পুলিশ ভেরিফিকেশনে আবেদনকারীদের ঠিকানা, চারিত্রিক এবং সামাজিক অবস্থা যাচাই করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো:
প্রার্থীর নাম, জন্মস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পেশাগত ইতিহাস।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, মুক্তিযোদ্ধা কোটার অন্তর্ভুক্তি বা অন্য কোনো কোটাধারী কি না।
কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপ, মামলার রেকর্ড, বা নজরবন্দি কি না।
তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ঘুস এবং হয়রানির অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। ঢাকার বাসিন্দা সুমাইয়া জাহিদ যেমন পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে সমস্যার সম্মুখীন হন এবং ঘুষ দিয়ে সমস্যার সমাধান করেন।
সমালোচনা এবং সমাধানের পথ
অনেকেই মনে করেন, এই প্রথা বাতিল হলে হয়রানি বন্ধ হবে। তবে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদার মতে, “নিরাপত্তার জন্য প্রার্থীর পটভূমি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুরোপুরি তুলে দেওয়া কোনো সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নয়।” তিনি প্রক্রিয়াটির দুর্নীতি বন্ধ এবং স্বচ্ছতার ওপর জোর দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেছেন, “পুলিশ ভেরিফিকেশন মূলত হয়রানির প্রতীক। স্থানীয়ভাবে চরিত্র সনদ গ্রহণ বা প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া প্রয়োগে সমাধান সম্ভব।”
বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব দিয়েছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য ডাটাবেসের মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য যাচাই করা যেতে পারে। এতে ভেরিফিকেশনের সময় এবং হয়রানির মাত্রা কমানো সম্ভব।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
পুলিশ সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, “ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক থাকার প্রয়োজন নেই। উন্নত দেশের মতো সরাসরি সেবাপ্রদানের মাধ্যমে বিষয়টি সহজতর করা উচিত।”
তবে এ সুপারিশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি হয়রানি বন্ধ করবে, আবার কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে।
শেষ কথা
পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথার সংস্কার কিংবা পরিবর্তন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। হয়রানি এবং দুর্নীতি রোধে প্রযুক্তি নির্ভর যাচাই ব্যবস্থা এবং জাতীয় ডাটাবেস শক্তিশালী করার মাধ্যমে একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সম্ভব।
Ingen kommentarer fundet